• ক্লান্ত কিন্তু পরাজিত নন! ৭৬-এর তরুণ দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রায় একার কাঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন হাইস্কুল...আশ্চর্য!
    ২৪ ঘন্টা | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • পার্থ চৌধুরী: শিক্ষক দিবসের আবহ (Teacher's Day)। সেই আবহে সামনে এল এক শিক্ষকের আশ্চর্য কাহিনি। নানা সমস্যার শিকার পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) জামালপুর ব্লকের বসন্তপুর জুনিয়র হাই স্কুল। জানা গিয়েছে, শিক্ষকসংকটে কার্যত বন্ধ হওয়ার উপক্রম এই বিদ্যালয়। তবে গ্রামের শিক্ষানুরাগী মানুষজন ও পাঁচজন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এখনও টিকে আছে স্কুলের পাঠশালা।

    ২০১০ সাল থেকে

    স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ স্কুলটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১০ সালে। তাঁর লড়াই, এলাকার মানুষের সহযোগিতা এবং প্রশাসনিক উদ্যোগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বসন্তপুর জুনিয়র হাই স্কুলের অনুমোদন মেলে। জমিবরাদ্দ থেকে শুরু করে স্কুলঘরনির্মাণ, গেস্ট টিচার নিয়োগ-- সব মিলিয়ে এগোতে থাকে স্কুলের পথচলা। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৬০ জন পড়ুয়া। ছ'টি ঘর-সহ রয়েছে মিড-ডে মিল রান্নার ঘরও। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পরিস্থিতি সংকটজনক। ২০১৮ সালে তিনজন স্থায়ী শিক্ষক অনুমোদিত হলেও বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়, তবুও কেউ যোগ দেননি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অবশেষে একজন সরকারি শিক্ষিকা যোগ দেন। বর্তমানে মাত্র একজন স্থায়ী শিক্ষিকা ও একজন অতিথি শিক্ষক নিয়ে চলছে পুরো স্কুল। ফলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যক্রম সামলানো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    স্কুলে তালা পড়া আটকাতে

    এই অবস্থায় স্কুলে তালা পড়া আটকাতে এগিয়ে এসেছেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ নিজেই। এবং তাঁর সঙ্গে এলাকার আরও পাঁচজন শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে। বিনা পারিশ্রমিকে তাঁরা বছরের পর বছর পড়াচ্ছেন কেবলমাত্র ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এলাকাবাসী তাঁদের এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগকে কুর্নিশ জানালেও বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে-- স্থায়ী শিক্ষক না পেলে কতদিন এভাবে স্কুল চালানো সম্ভব হবে?

    ক্লান্ত সৈনিক

    ৭৬ বছরের দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ নিজেই খানিক ক্লান্ত। তবুও তিনি দায়িত্ব সামলে যাচ্ছেন। লড়াই ছাড়েননি। তাঁর কথায়, নিঃস্বার্থে এই শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই স্কুলে এখনও তালা-পড়া আটকানো গিয়েছে। কিন্তু দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক না পেলে স্কুলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এক অভিভাবক সুব্রত ঘোষের আক্ষেপ, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন থেকে আজ অবধি দ্বিজেন্দ্রনাথবাবুই সব দায়িত্ব বহন করেছেন। বয়সের ভারে তিনি আর পেরে না উঠলে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)