অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: প্রয়াত ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মাত্র ৪৯ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। গত ২৭ জুলাই রাতে গ্রিন করিডর করে তাঁকে বহরমপুর থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলেই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। বিধায়কের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েন তাঁর বৃদ্ধা মা , তিন কন্যা ও স্ত্রীকে। এছাড়াও তার দুই ভাই ও তাঁদের পরিবার রয়েছে।
ডোমকলের গোবিন্দপুরে তাঁর বাড়ি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন বেশ বর্ণময়। বছর কুড়ি আগেও লোকে তাঁকে চিনতেন না। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ভাইদের মধ্যে তিনি মেজো। সিপিএম করলেও নিজেকে মিটিং মিছিলে দেখা যেত না। চাকরির চেষ্টায় অনেক ঘোরাঘুরি করেছেন। চাকরি জোটাতে না পারায় মারুতি চালানো দিয়ে কর্মজীবনে ঢোকেন। সেখান থেকে মুড়িমিলের মালিক হন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছে ছিল তাঁর। একসময় বাড়ির কাছেই গড়ে তোলেন বিএড কলেজ। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। স্থানীয়রা জানান, কলেজ করার আগে কিছুদিন ধর্মীয় প্রচারের কাজ করেছেন, তবে সেটা কয়েক বছর। তারপরই বিএড কলেজ করেন। এক এক করে ডিএড কলেজ করেছেন। তার সঙ্গে পলিটেকনিক ও ফার্মাসিষ্ট কলেজ মিলিয়ে মোট ৭ টি কলেজ তাঁর। ডোমকলে একটি পেট্রল পাম্পও রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৭ সালে ডোমকল পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। শুরু হয় রাজনৈতিক উত্থান। তারপরে ২০১৯ সালে তৃণমূলের দলীয় কোন্দলের জেরে ডোমকল পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান সৌমক হোসেনের অপসারণের পর দল তাঁকে চেয়ারম্যান করে। হাতে আসে ব্যাপক ক্ষমতা। তাঁকে কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালে ডোমকল থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ডোমকলে বামফ্রন্টের অবসান ঘটিয়ে তিনিই তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক হন। পাশাপাশি পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্বেও ছিলেন। দিনসাতেক আগে তার অসুস্থতার জন্য তাঁকে সরিয়ে নতুন প্রশাসক করা হয় ডোমকলের এসডিওকে। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বাড়িতে একবার এনআইএ তল্লাশি হয়েছিল। সম্প্রতি ডোমকল পুরসভাতেও তার স্বজনপোষণ নিয়ে কথা উঠেছে। সে সব নিয়ে মোকাবিলার আগেই বৃহস্পতিবার তাঁর জীবনাবসান হয়। ঘটনায় শোকজ্ঞাপন করেন অনেকে। তৃণমূলের ডোমকল টাউন সভাপতি কামরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী ছিলেন জাফিকুল ইসলাম, তাঁর এই অকাল প্রয়াণে আমরা শোকার্ত। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।” সিপিএমের ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রানা বলেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও কথা হত। এভাবে তাঁর চলে যাওয়ায় আমি মর্মাহত।”