অর্ণব দাস, বারাকপুর: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে জমি বিক্রির নামে প্রতারণা, লক্ষাধিক টাকা খুইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সোদপুরের এক দম্পতি। মেয়ের অসুস্থতার জন্য টাকা প্রয়োজন বলে তিনি জমি বিক্রির প্রস্তাবে রাজি হন। কিন্তু তাতে অন্তত ৩ লক্ষ টাকা খোয়াতে হল বলে অভিযোগ দম্পতির। অভিযুক্তের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন ধরছেন না তিনি। কোনও খোঁজও মিলছে না। বিষয়টি নিয়ে এবার পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পথে প্রতারণার শিকার ওই দম্পতি।
অভিযুক্তের নাম মাসুদ মণ্ডল। নিজেদের তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করে মূলত দালালির কাজ করেন। সেভাবেই সোদপুরের প্রিয়নগরের বাসিন্দা সাধন দাস ও শম্পা দাসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দাস দম্পতির মেয়ে অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। মাসুদ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের একটি জমি বিক্রির কথা বলেছিলেন সাধনবাবু। তাঁর অভিযোগ, গত চার বছর ধরে জমি বিক্রির টাকা বাবদ তিন লক্ষ টাকা আটকে রেখেছে। মাসুদকে ফোন করলে ফোনও ধরছেন না বলেও অভিযোগ। এই মুহূর্তে মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগের আর কোনও রাস্তাই দেখছেন না সাধন দাস, শম্পা দাস।
উপায়ন্তর না দেখে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক কাঠা জমি কেনার জন্য জেঠিয়া এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মণ্ডলের সঙ্গে দাস দম্পতির পরিচয় হয়। মাসুদ তাঁদের জানান, ৮লক্ষ টাকার প্লটে জমি বিক্রি করে দেবেন। এর জন্য ধাপে ধাপে টাকা দিলেও হবে। জমির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ হলে সরকারি প্রকল্পের বাড়ি করিয়ে দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে তাঁরা প্রায় তিন লক্ষ টাকা এবং সোনার গয়না বন্ধক রাখার জন্য মাসুদকে দিয়েছিলেন। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও জমি বা টাকা ফেরত না পেয়ে শেষে কার্যত সর্বস্বান্ত দম্পতি। সাধনবাবু বলেন, ”প্লটে ১কাটা জমি বিক্রি করবে বলেছিল। প্রথমে ১লক্ষ ৮০হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সবমিলিয়ে নগদ প্রায় ৩লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। বলেছিল, ধীরে ধীরে টাকা দিলেই হবে। রেজিস্ট্রি করে দেবে বলে স্ত্রীর হাতের সোনার শাখাবাঁধানো ও মেয়ের গলার সোনার হার নিয়ে বন্ধক দিয়ে টাকা নিয়েছিল। জমি কেনার পর সরকারি ঘরও করে দেবে বলেছিল।
শম্পাদেবীর কথায়, “রাজ্যের মন্ত্রী এমনকী জেলা ও রাজ্যের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ওর খুব ভালো সম্পর্ক বলে বলত মাসুদ। তাই বিশ্বাস করে এত টাকা সোনার গয়না দিয়েছিলাম। পরে জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে টাকা ফেরত দেবে বলেছিল, কিন্তু দেয়নি। অনেক তারিখ দিয়েছে। শেষে বলেছিল আগস্ট মাসে শোধ করবে।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মাসুদ মণ্ডল বলেছেন, “কোনও তৃণমূল নেতার নাম করে জমি বিক্রির নামে টাকা নিইনি। ওটা আমার নিজের জমি, ওঁরা বায়না করেছিল। টাকা বকেয়া আছে তাই জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। বাকি টাকা দিলেই রেজিস্ট্রি করে দেব।”