জিএসটি জটিলতার জন্য দায়ী বিজেপিই: কংগ্রেস, ইউপিএ তো বাচ্চাদের টফিতেও ট্যাক্স নিত, পাল্টা আক্রমণ মোদির
বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’—জিএসটিকে এভাবেই কটাক্ষ করে এসেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, নোট বাতিল ও জিএসটির মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিয়েছে মোদি সরকার। সেই আবহেই সরকারের জিএসটি কমানোর পদক্ষেপে নৈতিক জয় দেখছে কংগ্রেস। অতীত টেনে তারা খোঁচা দিতে ছাড়ছে না। হাত শিবিরের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন এই বিজেপি সরকারই জিএসটিকে জটিল করে তুলেছিল। বরং আট বছর ধরে এই কর ব্যবস্থার সরলীকরণের দাবি জানিয়ে এসেছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার এক দলীয় বিবৃতিতে রাহুল গান্ধীর দলের খোঁচা, বর্তমান চেহারার এই সংস্কার বাস্তবে ‘জিএসটি ১.৫’। এর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ চাঙ্গা হয় কি না, এবং ক্ষুদ্ধ, ছোট ও মাঝারি ব্যবসার বোঝা কমে কি না, সেদিকে নজর থাকবে। প্রকৃত ‘জিএসটি ২.০’-এর জন্য অপেক্ষা অব্যাহতই রইল। মোদি সরকারকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূলও। এক্স হ্যান্ডলে দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের ২ আগস্ট কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখে জীবন ও স্বাস্থ্যবিমায় ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তা মেনে নিলেন। যদিও বন্ধু ডোনাল্ডের চাপানো ৫০ শতাংশ ট্যারিফের ধাক্কা সামাল দিতেই এই পদক্ষেপ। আম আদমি বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই জারি থাকবে।’
বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণের জবাব দিতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর পাল্টা তোপ, ‘২০১৪ সালে আমি ক্ষমতায় আসার আগে রান্নার বাসনপত্র থেকে কৃষি সরঞ্জাম কিংবা ওষুধ, এমনকী জীবনবিমাতেও আলাদা আলাদা ট্যাক্স নিত কংগ্রেস সরকার। টুথপেস্ট, সাবান, চুলের তেলে ২৭ শতাংশ, খাবারের থালা, কাপপ্লেট, চামচে ১৮ থেকে ২৮ শতাংশ কর ছিল। ইউপিএ সরকার তো বাচ্চাদের টফিতেও ২১ শতাংশ ট্যাক্স নিত।’ শুধু তা-ই নয়, সাইকেলে ১৭ শতাংশ, দেশের লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ভরসা সেলাই মেশিনে ১৬ শতাংশ, সিমেন্টে ২৯ শতাংশ এবং মধ্যবিত্তের ভ্রমণ খরচে (হোটেল) ১৪ শতাংশ ট্যাক্সের কথাও উল্লেখ করেছেন মোদি। তাঁর কথায়, ২০১৪ সালের আগে কৃষিকাজে খরচ বেশি ছিল, লাভ কম হতো। কারণ, কংগ্রেস সরকার কৃষিপণ্যে প্রচুর কর নিত।’ জিএসটি কমানোকে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড়ে সংস্কার বলেও দাবি করেছে মোদি।
যদিও প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তাঁর দাবি, ‘এক দেশ, এক কর’কে বিজেপি সরকার ‘এক দেশ, ৯ কর’ ব্যবস্থায় পরিণত করেছিল। জিএসটি সংস্কারের কাজে দীর্ঘ বিলম্বের জন্য মোদি সরকারকে একহাত নিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমও। এক্স হ্যান্ডলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘জিএসটি সংস্কার এবং পণ্য ও পরিষেবা করের স্ল্যাব কমানোর পদক্ষেপ স্বাগত। কিন্তু তা করতে আট বছর দেরি হয়ে গেল। আমরা গত আট বছর ধরে জিএসটির নকশা ও হার নিয়ে এই দাবি জানিয়ে এলেও সরকার তা কানেই তোলেনি। এতদিনে কেন সরকারকে সেই পথে হাঁটতে হল সেটাই জল্পনার আসল বিষয়। বৃদ্ধির শ্লথ হার, সঞ্চয় কমে গিয়ে পরিবারগুলির দেনায় ডুবে যাওয়া?’ পাল্টা সুর চড়িয়েছে বিজেপিও। তাদের তোপ, কংগ্রেস তো ২০১৪ সালের আগে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। অভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু করতে ওদের কে বাধা দিয়েছিল? জিএসটি সরলীকরণের এই পদক্ষেপে গোটা দেশ আজ উচ্ছ্বসিত।