নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (সিএএ) ঘিরে ফের কেন্দ্রকে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন কেন্দ্রের মোদী সরকারকে। তাঁর সোজাসাপটা প্রশ্ন, ‘২০২৪ সালের মধ্যে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবেন তো?’ এর প্রশ্নের পাশাপাশি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেন মমতা। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, রাজ্যে কারও নাগরিকত্ব কাড়তে দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে অথবা আশঙ্কায় ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানরা শরণার্থীর মর্যাদা পাবেন। বৈধ নথি থাক বা না থাক, এমনকি ভিসার মেয়াদ ফুরোলেও তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে না। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরায় পালিয়ে আসা হিন্দু বাঙালিদের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি মিলবে বলেই কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি।
কিন্তু সেই গেজেট বিজ্ঞপ্তি নিয়েই প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভার ভাষণে তিনি কেন্দ্র সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ভোটের আগে ক্যা ক্যা করে বেড়ায় ওরা। এতদিন কাউকে নাগরিকত্ব দেয়নি, এবার কি দেবে?’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা কারও নাগরিক অধিকার কাড়তে দেব না।’
মমতা ঠারেঠোরে অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ভোটের রাজনীতি করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড গেম খেলছে। রাজবংশী, মতুয়া সমাজের মানুষ কেন এখনও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন? কোচবিহারের মানুষকে কেন এনআরসি নোটিস পাঠানো হচ্ছে?’
তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম নথি দেখিয়ে দাবি করেন, দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীর ১৯৬৬ সালেই ভোটার তালিকায় নাম উঠেছিল। তা সত্ত্বেও অসম সরকার এনআরসি নোটিস দিয়েছে। একইভাবে নিশিকান্ত দাস নামে কোচবিহারের আরও এক বাসিন্দাকেও নোটিস পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, মহারাষ্ট্রের পুণেতে মতুয়া পরিবারের উপর হেনস্থার অভিযোগ নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘যাঁদের বৈধ পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সই করা কার্ড রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে।’
মমতা অভিযোগ করেন, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে বাংলাভাষীদের অপমান করছে। তাঁর কথায়, ‘বাংলা জাতীয় সঙ্গীত তৈরি করেছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। অথচ এরা বাংলার ইতিহাস কিছু জানে না, ইংরেজদের দালালি করেছে। বাংলাকে অসম্মান করছে।’
ভোটের আগে সিএএ কার্যকর নিয়ে বৃহস্পতিবার বিধানসভা অধিবেশনে কেন্দ্র– রাজ্যের এই রাজনৈতিক চাপানউতোর ঘিরে নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে।