বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলা-বাঙালি ‘নিগ্রহে’র অভিযোগের পাল্টা ‘বাঙালি-বান্ধব’ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্রিয় হচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। প্রবাসী মন পেতে এ বার দুর্গোৎসবের সময়ে ‘পরিযায়ী’ হচ্ছেন বিজেপি নেতারা! দু’দফায় প্রায় ২২টি রাজ্যে যাওয়ার কথা রাজ্য বিজেপির নেতাদের। তাঁদের লক্ষ্য, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের কাছে রাজ্যের ‘প্রকৃত ছবি’ তুলে ধরা। সেই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘নিগ্রহে’র প্রচারের উল্টো দিকে তাঁদের কাছে টানার মরিয়া চেষ্টা।
বাংলা-বাঙালি ‘নিগ্রহ’ নিয়ে যখন তৃণমূল সুর চড়ানো শুরু করেছিল, তখন বিজেপির ঘোষিত অবস্থান ছিল, এই নিয়ে পাল্টা প্রচারে তারা নামবে না। কিন্তু যত দিন গিয়েছে,নিগ্রহের দৃষ্টান্ত বেড়েছে। তেমনই দলের বিভিন্ন নেতার আলটপকা মন্তব্যে বিড়ম্বনা বেড়েছে রাজ্য বিজেপির। তাই পাল্টা এ বার বাইরের রাজ্যের বাঙালিদের কাছে টেনে বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি। অন্য রাজ্যে থাকা বাঙালিদের বড় অংশই বাংলার ভোটার নন। তবে বাংলার সঙ্গে পারিবারিক যোগসূত্র আছে। আবার বাইরে কর্মরতদের একাংশ এখনও এ রাজ্যের ভোটার। এমতাবস্থায় ভিন্ রাজ্যে কর্মসূত্রে থাকা সব বাঙালি বিপন্ন নন, প্রবাসীদের মাধ্যমে এই বার্তা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করে তোলা বিজেপির অন্যতম লক্ষ্য।
যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবনা। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে এক প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাবেন।”
সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির বিধাননগর দফতরে সুনীল বনসলের উপস্থিতিতে বৈঠক করে নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পরে বিধাননগরের একটি হোটেলে ক্লাস নেওয়া হয়েছে নেতাদের। বলা হয়েছে, উৎসবের মরসুমে ভিন্ রাজ্যে পড়ে থাকতে হবে এই রাজ্যের নেতাদের। বিভিন্ন রাজ্যে কাজের জন্য গিয়েছেন কিন্তু এ রাজ্যের ভোটার, এমন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাশে থাকার বার্তা দিতে বলা হয়েছে বঙ্গ বিজেপির প্রতিনিধিদের। সেই সঙ্গেই ভিন্ রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও অন্য ক্ষেত্রে সফল এবং প্রভাবশালী বাঙালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই রাজ্যে বসবাসকারী তাঁদের আত্মীয়দের কাছে বিজেপির অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা হবে।
সূত্রের খবর, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম দফায় নেতারা ভিন্ রাজ্যে যাবেন। পরবর্তী ধাপে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁদের ফের বাইরে যাওয়ার কথা। সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীকের সুরাতে এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের বারাণসী যাওয়ার কথা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর যাওয়ার কথা ত্রিপুরায়। এ ছাড়া, রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল গুজরাত এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় উত্তরাখণ্ড যেতে পারেন। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ তামিলনাড়ু, সুশান্ত ঘোষ ছত্তীসগঢ়, লক্ষণ ঘোড়ুই রাজস্থান যেতে পারেন। ভারতী ঘোষ, অনুপম মল্লিক, কৌস্তভ বাগচী, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, কেয়া ঘোষ, তাপস রায়, অর্জুন সিংহদেরও ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হতে পারে। কেন্দ্রীয় ভাবে এই কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ ও দুষ্মন্ত গৌতম।
রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, “দুর্গাপুজোর উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙালিরা একত্রিত হন। তাই এই সময়টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাতে একসঙ্গে অনেক বাঙালির কাছে এক বারে পৌঁছনো সম্ভব হয়।” যদিও এই পরিকল্পনা নিয়েও দলের অন্দরে ভিন্নমত আছে। এক নেতার বক্তব্য, “দুর্গোৎসব পশ্চিমবঙ্গে জনসংযোগের বড় হাতিয়ার। এই সময়ে গুরুত্বপুর্ণ নেতারা বাইরে চলে গেলে এখানে জনসংযোগের বড় সুযোগ হাতছাড়া হবে। নিশ্চয় এই নিয়ে নেতৃত্ব ভাবনা-চিন্তা করবেন।” তবে শমীকের যুক্তি, “মহালয়া থেকেই পুজোর আবহ শুরু হয়, সেই রেশ থাকে বিজয়া সম্মিলনী পর্যন্ত। পুজোর দিনগুলোয় সকলে এলাকাতেই থাকবেন। তার আগে-পরে নির্দিষ্ট রাজ্যগুলিতে যাবেন।”