• বিল নিয়ে রাজ্যপালের ক্ষমতা মানুষের ইচ্ছার পরিপন্থী, সময় বাঁধা দরকার কেন? সুপ্রিম কোর্টে বলল মমতার সরকার
    আনন্দবাজার | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • যে কোনও বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্যপাল যদি একচ্ছত্র ক্ষমতা পান, তবে রাজ্য আইনসভার কার্যকারিতা বিপন্ন হবে। এটা জনসাধারণের ইচ্ছার পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্টে এমনটাই মন্তব্য করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কেন রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালকে বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন, তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। বুধবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কর্নাটক, হিমাচল প্রদেশের আইনজীবীরাও রাজ্যপালের ক্ষমতার বিরোধিতায় সওয়াল করেছেন।

    রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে, ভারতের সংবিধান রাজ্যপালকে কোনও প্রভাবশালী পদ, রাজ্যের আইনসভা বা প্রশাসনের কাজে কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়নি। তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। কিন্তু একচ্ছত্র ক্ষমতার বলে তিনি যদি বছরের পর বছর কোনও বিল আটকে রাখেন, তবে জনগণের ইচ্ছাকে অস্বীকার করা হয়। গণতন্ত্রে যা বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাজ্য আইনসভায় বিলের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকেই তুলে ধরেন। রাজ্যপালের বিল আটকে রাখার ক্ষমতা তাই সাংবিধানিক পরিকল্পনাকে বিপর্যস্ত করে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের আইনজীবী।

    উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সংঘাতের কথা কারও অজানা নয়। রাজ্যের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, ‘‘যদি কেন্দ্রের যুক্তি মেনে নেওয়া হয়, তবে আলোচনা, যুক্তি এড়িয়ে আইনসভার প্রাধান্য উপেক্ষা করে রাজ্যপাল নিজের মতো কাজ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপালের পদটি অতিসাংবিধানিক পদে পরিণত হবে। গণতন্ত্রের সঙ্গে তা সঙ্গত নয়।’’ বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতে বিল অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলিয়ে রাখতে রাজ্যপালের পদটিকে ব্যবহার করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, আশঙ্কা রাজ্য সরকারের। আইনজীবী সিব্বলের মন্তব্য, ‘‘বৈবাহিক সম্পর্কে বিরোধিতা থাকলে সংসার চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য। রাজ্য আইনসভা, প্রশাসন এবং সাংবিধানিক প্রধানের কাজে সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন।’’ বিল নিয়ে সংবিধানে রাজ্যপালকে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

    নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভায় পাশ হওয়া কোনও বিল নিয়ে রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না-পারলে তিনি তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে বিলের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া উচিত রাষ্ট্রপতির— এই মর্মে এর আগে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সে রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় গত এপ্রিল মাসের নির্দেশে রাজ্যপালকে এক মাস এবং রাষ্ট্রপতিকেও তিন মাসের মধ্যে পদক্ষেপ করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। রাজ্যপালের আচরণকে ‘বেআইনি’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্র। জানতে চাওয়া হয়, শীর্ষ আদালত কি এ ভাবে রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারে? রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও গত ১৩ মে ওই বিষয়ে ১৪টি সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের মতামত জানতে চান। এর পর সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত সমাধানের জন্য পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেছিল। বিচারপতি গবই, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি এএস চান্দুরকরের সেই বেঞ্চ এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের যুক্তি মেনেও নেয়। আদালতে সেই সংক্রান্ত শুনানিতেই পশ্চিমবঙ্গ ভিন্ন যুক্তি দিল।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)