• মার্শাল দিয়ে টেনে বার করার সময় অসুস্থ শঙ্কর! মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের মাঝে উত্তপ্ত বিধানসভা, সাসপেন্ড পাঁচ পদ্ম-বিধায়ক
    আনন্দবাজার | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের মাঝে উত্তপ্ত হল বিধানসভা। ধস্তাধস্তিতে জড়ালেন তৃণমূল এবং বিজেপির বিধায়কেরা। তারই মাঝে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ।

    স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অমান্য করে বিধানসভায় হইহট্টগোল চালিয়ে যাওয়ার কারণে সাসপেন্ডও হয়েছেন বিজেপির পাঁচ বিধায়ক। তাঁদের মধ্যে শঙ্কর ছাড়াও রয়েছেন মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা, বঙ্কিম ঘোষ এবং অগ্নিমিত্রা পাল। এর আগেও বিজেপি বিধায়কেরা সাসপেন্ড হয়েছেন। বেশ কয়েক বার সাসপেন্ড হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু একসঙ্গে এত জন বিধায়কের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ঘটেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না।

    অধিবেশন শেষ হওয়ার পর বিধানসভাতেই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্পিকার বিমানের প্রশংসা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আজ এত গোলমাল হল, বিমানদা যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেন! উনি আইনজীবীও। ফলে অভ্যাসটা তো প্রথম থেকেই রয়েছে।’’ বিজেপি বিধায়কদের সাংপেন্ড হওয়া প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দিল্লিতেও আমাদের ৪৬ জনকে (সাংসদদের) একসঙ্গে বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা তো অপেক্ষা করেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিয়েছি, যাতে সুমতি ফিরে আসে।’’

    বাংলা ভাষার ‘অপমান’ এবং ভিন্‌রাজ্যে বাঙালিদের ‘হেনস্থা’র বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা ছিল বিধানসভায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতারও ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল বেলার দিকে। সেইমতো মমতার ভাষণ শুরু হওয়ার ঠিক আগেই বিজেপি বিধায়কেরা হইহট্টগোল শুরু করেন। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন শঙ্কর। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিজের আসনে বসতে বলেন একাধিক বার। অভিযোগ, শঙ্কর শোনেননি স্পিকারের কথা। তার পরেই স্পিকার মার্শালকে ডাকেন তাঁকে অধিবেশন কক্ষ থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেইমতো বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা এসে শঙ্করকে টেনে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

    বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা শঙ্করকে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেন বিজেপি বিধায়কেরা। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়ক মিহির। সেই সময় ধস্তাধস্তির মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন শঙ্কর। পরে তাঁকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হয়।বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, অসুস্থ শঙ্করকে পরে জেএন রায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে ফোন করে তাঁর খোঁজও নেন জেপি নড্ডা।

    এ সবের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হয়। সেই সময়েও আবার স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি বিধায়কেরা। ‘চোর চোর’ স্লোগান তোলেন তাঁরা। পাল্টা তৃণমূল বিধায়কেরাও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলেন। ওয়েলে নেমে যান তাঁরা। স্পিকার দু’পক্ষকেই শান্ত হতে বললেও উত্তেজনা কমেনি। শেষে মুখ্যমন্ত্রীই নিজের আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে তৃণমূল বিধায়কদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়া তৃণমূল বিধায়কদের নিজের নিজের আসনে পাঠান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তার পরেও দলীয় বিধায়কেরা চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকায় তাঁদের ধমক দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী ধমক খান হুমায়ুন কবীর এবং নির্মল ঘোষ। মমতা বলেন, ‘‘আমার কথা না শুনলে আমি স্পিকারকে অনুরোধ সাসপেন্ড করতে অনুরোধ করব।’’

    হইহট্টগোলের মাঝে স্পিকার জানিয়ে দেন, বিজেপি বিধায়কদের স্লোগান নথিভুক্ত হবে না। পাশাপাশি শঙ্করকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা। পরে তাঁকেও সাসপেন্ড করা হয়। স্পিকার মহিলারক্ষীদের নির্দেশ দেন অগ্নিমিত্রাকে অধিবেশন কক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যদিও অগ্নিমিত্রা নিজেই বেরিয়ে যান। পরে মিহির, অশোক এবং বঙ্কিমেরাও চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকায় তাঁদেরও সাসপেন্ড করেন স্পিকার। তাঁদের অধিবেশন কক্ষ ছাড়তে বলা হয়। কিন্তু সেটাও তাঁরা না শোনায় আবার মার্শাল ডাকা হয়। মার্শাল দিয়ে পাঁজাকোলা করে বার করে দেওয়া হয় মিহিরকবিজে

    জে এন রায় হাসপাতালে রাতে চিকিৎসাধীন বিজেপি বিধায়ক শঙ্করকে দেখতে গিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)