‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত প্রার্থীদের নিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি, তাঁরা যাতে গ্রুপ সি-র চাকরি পান, তার চেষ্টা করছি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা
আনন্দবাজার | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২০১৬ সালের এসএসসিতে চাকরি পাওয়া ২৫,৭৩৫ জনের। ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকাও প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই আবহে এ বার কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহ থেকে অযোগ্যদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। জানালেন, শিক্ষকের চাকরি ফিরিয়ে দিতে না পারলেও তাঁদের জন্য বিকল্প চাকরির ব্যবস্থা করবেন। যাতে তাঁরা অন্তত গ্রুপ সি-র চাকরি পান।
ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘১০ বছর শিক্ষক হিসাবে কাজ করার পরেও যাঁদের আজ অযোগ্য বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা তাঁদের নিয়ে আইনি আলোচনা করছি। আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হয়তো তাঁরা আর শিক্ষক হতে পারবেন না, কিন্তু তাঁরা যাতে অন্তত গ্রুপ সি-র চাকরি পান, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তাঁদের হতাশ হতে বারণ করব। কারণ, আমাদের সরকার মানবিক সরকার।’’
১০ বছর ধরে চাকরি করার পর কাউকে কাউকে ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত একাংশের বক্তব্য, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এসএসসি-তে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই বছরই ২৭ নভেম্বর ওএমআর শিটে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর দু’বছর পর ২০১৮ সালের ১২ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত প্যানেল। ২৮ অগস্ট প্রকাশিত হয় প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের মেধাতালিকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষক হিসাবে চাকরি পান নির্বাচিতেরা। অর্থাৎ, যাঁদের চাকরি গিয়েছে, চলতি বছর পর্যন্ত ধরলে বেশির ভাগই ছ’-সাত বছর ধরে চাকরি করেছেন। এর মধ্যে দাগি অযোগ্যেরাও রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে গত শনিবার ‘দাগি’দের তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। ১,৮০৬ জন ‘দাগি’ অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তার মধ্যে যাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অ্যাডমিট কার্ডও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, এক জন দাগিও নতুন নিয়োগে অংশ নিতে পারবেন না। এ বার ‘মানবিক’ কারণে আইনি পরামর্শ নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছে শিক্ষারত্ন সম্মান। সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের কৃতী ছাত্রছাত্রীদেরও। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেরা স্কুলগুলির হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়ার পর বক্তৃতা করেন মমতা। বক্তৃতায় উঠে আসে শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মীনিয়োগ থেকে বৃত্তি, স্কুলছুট থেকে এসএসসি প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষক পদে এখনও মোট ৫৬ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫,৭২৬টি পদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। আরও ২১ হাজার পদ খালি রয়েছে। আমরা নিয়োগ করতে চাই। কিন্তু আইনের জটিলতায় তা হচ্ছে না। যাঁরা আইনকে বেলাইন করে দিয়েছেন, তাঁদের জন্য হচ্ছে। আদালতকে দোষ দেব না। আমাদেরই মধ্যে কিছু কিছু লোক আছে, তাদের জন্য এমন হচ্ছে। কত লোকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেল।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, যাঁরা চাকরি করতেন, যাঁরা ‘আনটেন্টেড’, তাঁদের জন্য ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বেশ কয়েক বছর চাকরি করে ফেলেছেন। তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বয়ঃসীমা বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছে। পাশাপাশি, ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে অভিজ্ঞতার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের হাত-পা বাঁধা। কিন্তু আমরা তাঁদের সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ফিরতে পারেন।’’
গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র অশিক্ষক কর্মচারীদের কথাও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজ্য। শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে দু’তিন মাসের মধ্যেই গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাঁদেরও যাতে বয়ঃসীমায় ছাড় দেওয়া যায়, তা নিয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।