নিয়োগ মামলা: কন্যা অঙ্কিতাকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশের
আনন্দবাজার | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী ও তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। বুধবার দুপুরে আলিপুরে বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেছেন বাবা-মেয়ে। একই সঙ্গে, আত্মসমর্পণ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য। পার্থ, সমরজিৎ আচার্য, পর্ণা বসু-সহ আরও অনেকেই জামিন চেয়েছেন। বিকেলে জামিনও হয়ে গিয়েছে তাঁদের।
সম্প্রতি এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। গত শুক্রবার গ্রুপ সি মামলাতেও আলিপুর আদালতে শেষ চার্জশিট জমা পড়েছে। এর আগে ওই মামলায় আরও দু’টি চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। সব মিলিয়ে চারটি চার্জশিট জমা পড়েছে। সব মামলা মিলিয়ে মোট ৭৫ জনকে আদালতে ডেকে পাঠানো হয়। সেই আবহেই বুধবার দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন পরেশ, অঙ্কিতারা। প্রসঙ্গত, এসএসসি-র প্রকাশিত ‘দাগি অযোগ্যদের’ তালিকার ১০৪ নম্বরে নাম রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী-কন্যার। এসএসসি দিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন অঙ্কিতা। সব ভালই চলছিল। তাল কাটে সেই দিন, যখন অঙ্কিতা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেন আর এক চাকরিপ্রার্থী ববিতা সরকার। ২০২২ সালে মে মাসে অঙ্কিতার চাকরি বাতিল করে দেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে বেতনের টাকাও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর কন্যার চাকরি এবং বেতনের প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা পান ববিতা। পরে জানা যায়, ববিতারও নম্বর মূল্যায়নে ভুল রয়েছে। তাঁরও চাকরি চলে যায়। শেষমেশ ওই চাকরি পান অনামিকা রায় নামে আর এক প্রার্থী! কিন্তু গত বছর ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যায় অনামিকার চাকরিটিও।
বুধবার আদালতে জামিনের আবেদন করেন পার্থ-সহ নিয়োগ মামলায় অভিযুক্তেরা। যদিও সিবিআইয়ের তরফে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। তাদের দাবি ছিল, প্রতিটি মামলার চরিত্র আলাদা। কোনও মামলার সঙ্গে অন্যটির মিল নেই। তা ছাড়া, সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, এই দুর্নীতি সমাজে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। এই সব নানা যুক্তিতে জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু বিকেলে অভিযুক্তদের জামিন হয়ে গিয়েছে। দুই মামলা মিলিয়ে পরেশ, অঙ্কিতা, পার্থ-সহ মোট ২৪ জন জামিন পেয়েছেন।
২০২২ সালে এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত শুরুর ৫১ দিনের মাথায় যে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে নাম ছিল পার্থ, সমরজিৎ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত প্রার্থী দীপঙ্কর ঘোষ, সুব্রত খাঁ, অক্ষয় মণি, ইদ্রিস আলি মোল্লা প্রমুখের। শেষ চার্জশিটে অবশ্য নতুন করে কারও নাম নেই। তবে কিছু নতুন তথ্যপ্রমাণ এবং নথি রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। সম্প্রতি অভিযুক্ত পাঁচ জনের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল সিবিআই। সেই সংক্রান্ত তথ্যও চার্জশিটে রয়েছে।