• প্র্যাকটিসে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম প্রদীপদাকে: মজিদ বাসকার
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ‘ওকে মিস্টার মজিদ বাসকার। আই অ্যাকসেপ্ট ইওর চ্যালেঞ্জ।’ সেদিন আগুন দেখেছিলাম কোচ পিকের চোখে। ১৯৮০’র সকাল। ইস্ট বেঙ্গল প্র্যাকটিস সরগরম। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেবারই আমি ও জামশিদ ইস্ট বেঙ্গলে সই করি। চার দশক আগের কথা। শরীরের রক্ত তাজা। মাথায় হাজারো দুষ্টুমি বুদ্ধি। ড্রেসিং-রুমে শুনতাম প্রদীপদা ছিলেন ওলিম্পিয়ান। কত বড় ফুটবলার? আর তা মাপতেই সরাসরি চ্যালেঞ্জ করি কোচকে। কী সেই চ্যালেঞ্জ? শট মেরে বল ক্রসবারে লাগাতে হবে। গোটা দশেক কিক নিয়েছিলেন পিকে। ফস্কেছিল খুব অল্পই। সেদিন আমার দর্প ভেঙে দেন কোচ। আর কখনও তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখাইনি। মনে মনে বলেছিলাম, ‘কোচ, আপকো মেরা সালাম।’ এরপর থেকে আরও অনেকের মতো ওস্তাদ মানি ওঁকে। ভারতের শিক্ষক দিবসে পিকে’কে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।
    অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। কথার খই ফুটছে। একটা বাড়তি এ যোগ করে প্রদীপদা ডাকতেন ‘মাজিদ।’ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে দিয়েছিলেন উনি। ইস্ট বেঙ্গল সেবার ভাঙা দল। একধাক্কায় একঝাঁক ফুটবলারকে ছিনিয়ে নিয়েছিল মহমেডান স্পোর্টিং। পিকে’ই ছিলেন দলের সবচেয়ে বড় তারকা। সমর্থকদের ভরসার জায়গা। হামারা স্টার। দুর্দান্ত ম্যাচ রিডিং। একইসঙ্গে অতুলনীয় ম্যান ম্যানেজমেন্ট। ভাবতাম, এই লোকটা ভারতে কি করছে? ওঁকে পেলে ইরানের যে কোনও ক্লাব লুফে নিত। হিন্দির পাশাপাশি উর্দুতেও চোস্ত। শায়েরি শুনলে বলতেই হতো, তোফা, তোফা। বড় ম্যাচের আগে পিকের অন্য মূর্তি। টিম মিটিংয়ের সময় কাঁদতে দেখেছি ফুটবলারদের। কীভাবে সেরাটা টেনে বার করতে হয় তা জানতেন পিকে।

    ভারতীয় ফুটবলের মক্কা হল কলকাতা। আপনারা ভালোবেসে মজিদের নাম দিয়েছিলেন বাদশা। কিন্তু বাদশা আভি বুড্ডা হুয়া। অবসরের পর বারবার মনে পড়ে ময়দানের কথা। মনো (মনোরঞ্জন) কেমন আছে? ইস্ট বেঙ্গলে ওই ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। দলের প্রয়োজনে ভাঙা হাত নিয়েও জোর করে মাঠে নামতে চাইত। গোলকিপার ভাস্কর ডাকাবুকো। মনে পড়ে মিহিরের কথা। মোহন বাগানে বাবলু ছিল লিডার। হারতে চাইত না। অল্প সময়ে বড় ভালোবেসেছিল শঙ্কর বাবা (মাঠকর্মী)। ইস্ট বেঙ্গল ফুটবলাররা বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। ক্লাবের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়ে শেষবার কলকাতা যাই। ড্রেসিং-রুমে পা দিয়েই শুনলাম অনেকদিন আগেই শঙ্কর বাবা মারা গিয়েছেন। জানি, প্রদীপদাও বন্দি উপরওয়ালার প্রাসাদে। গ্রেট কোচ, দেখা হয়নি আপনার সঙ্গে। ছোটি সি মুলাকাত তোলা রইল আগামীর জন্য। সেদিন না হয় আবার মাজিদের পিঠ হাত রেখে আপন করে নেবেন।
  • Link to this news (বর্তমান)