তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবারেই কুণাল স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি ঘটনাপ্রবাহে আদৌ বিচলিত নন। শুক্রবার আরও একধাপ এগিয়ে তৃণমূলের ঘোষ জানিয়ে দিলেন, তিনি মিঠুনের মানহানির মামলার মোকাবিলা করবেন ‘রাজীব কুমার মডেল’ অনুসরণ করে।
কী সেই ‘রাজীব কুমার মডেল’?
সারদা মামলায় ২০১৯ সালে পুলিশকর্তা রাজীব কুমারের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে কুণালকে জেরা করেছিল সিবিআই। উল্লেখ্য, কুণালই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, তিনি রাজীবের মুখোমুখি বসতে চান। মেঘালয়ের শিলং শহরে হয়েছিল সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। প্রসঙ্গত, সারদা তদন্তে রাজ্য সরকার যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল, তার মাথায় ছিলেন রাজীব। সেই সিটই গ্রেফতার করেছিল কুণালকে।
মিঠুনের ক্ষেত্রেও সেই মডেল অনুসরণ করতে চান কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আদালতে গিয়ে বলব, আমায় মিঠুনদার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক। সাক্ষী হিসাবে হাজির থাকুন সিবিআইয়ের এসপি।’’ কুণাল এ-ও বলছেন, ‘‘আমার কাছে আরও এমন সাক্ষী আছেন, যাঁরা কোর্টে গিয়ে দাঁড়ালে মিঠুনদার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’’
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মিঠুনের মামলার কোনও নোটিস হাতে পাননি বলে কুণাল জানিয়েছেন। তবে তিনি এ-ও বলছেন যে, শীঘ্রই নোটিস পেয়ে যাবেন। মিঠুনের অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ থেকে কুণাল উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ‘অসত্য ও কুরুচিকর’ মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ, মিঠুন চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন কুণাল। মিঠুন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুধুমাত্র নিজেকে বাঁচানোর জন্য, এমন মন্তব্য করার অভিযোগও উঠেছে। বিজেপি নেতা মিঠুনের অভিযোগ, তাঁর ছেলে ধর্ষণ মামলার সঙ্গে যুক্ত বলে প্রচার করেছেন কুণাল, যা একেবারেই সঠিক নয়। এমনকি, তাঁর স্ত্রীও আর্থিক লেনদেনে জড়িত বলে কুণাল মন্তব্য করেছেন! যা সর্বৈব অসত্য। এমনটাই অভিযোগ মিঠুনের।
মিঠুনের তরফে মামলার হুঁশিয়ারি পেয়ে ইতিমধ্যেই কাগজপত্র গোছগাছ শুরু করেছেন কুণাল। সারদা, রোজভ্যালি-সহ বিভিন্ন চিটফান্ডের সঙ্গে মিঠুনের লেনদেন সংক্রান্ত কাগজপত্র বার করে গুছিয়ে রাখছেন। প্রসঙ্গত, একটা সময়ে মিঠুনের সঙ্গে কুণালের সম্পর্ক ছিল দাদা-ভাইয়ের মতো। ২০১১ সালের পরে তাতে চিড় ধরতে শুরু করে। তার পরে দু’জনের রাজনৈতিক পথও আলাদা হয়ে যায়। কুণালের কথায়, ‘‘অভিনেতা মিঠুনদাকে প্রণাম। একটা সময়ে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল, সেটাও আলাদা বিষয়। কিন্তু এখন যে তিক্ততা উনি শুরু করেছেন, তাতে ওঁকে কাঁদিয়ে ছাড়ব!’’ তিনি কি প্রস্তুতি নিচ্ছেন? কুণালের জবাব, ‘‘প্রস্তুতি নয়। চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ!’’
রাজীবের মুখোমুখি বসিয়ে কুণালকে জেরা করা হয়েছিল শিলংয়ে। ঘটনাচক্রে, যে শহর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র প্রেক্ষাপট। ছ’বছর আগে শিলং রওনা হওয়ার প্রাক্ মুহূর্তে কুণাল সেই ‘শেষের কবিতা’র চরিত্রকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, ‘লাবণ্য, শুনতে পাচ্ছো?’’ মিঠুনের ক্ষেত্রেও তেমন ‘শিলং সফর’ চাইছেন কুণাল। চাইছেন ফের একবার ‘লাবণ্য’কে ডাকতে।