• কারুর পৌষমাস তো কারুর সর্বনাশ, বন্যা বিধ্বস্ত পাঞ্জাবে হুহু করে বাড়ছে নৌকা বিক্রি
    আজকাল | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: একেই বলে কারুর পৌষমাস তো কারুর সর্বনাশ! বন্যা বিধ্বস্ত পাঞ্জাবে একদিকে হাহাকার, অন্যদিকে ব্যবসায় চুটিয়ে লাভের মুখ দেখছেন নৌকা ব্যবসায়ীরা। তুঙ্গে নৌকা এবং লাইফ জ্যাকেটের চাহিদা। প্রায় চার দশক ধরে নৌকা বিক্রি করছেন পাঞ্জাবের ৭৮ বছর বয়সী মোহন সিং। তিনি বলেছেন, "আগে, আমরা মাসে পাঁচ-ছয়'টি নৌকা বিক্রি করতাম। এখন, আমার ৩০টি নৌকা গত ১০ দিনে বিক্রি করেছি।" উদ্ধারকর্মী এবং সাধারণ নাগরিক- দুই তরফেই রয়েছে চাহিদা।

    গত দুই সপ্তাহ ধরে, পাঞ্জাবের বন্যকবলিত অঞ্চলে উদ্ধার কাজ ও মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য হাজার হাজার নৌকার প্রয়োজন হেছে। কেবল বেসামরিক প্রশাসনই নয় - সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীও প্রত্যন্ত এলাকায় সাহায্য এবং ত্রাণ সরঞ্জাম বিতরণের জন্য এই নৌকাগুলি ব্যবহার করছে।

    নৌকাগুলির চাহিদা বৃদ্ধি:চাহিদা বাড়ায় প্রচণ্ড ব্যস্ত নৌকা নির্মাতারা। দিন-রাত এক করে কাজ চলছে।। বিষণ সিং অ্যান্ড সন্সের রোপার কারখানায়, শ্রমিকরা মোটরবোট তৈরির জন্য অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। মোহন সিং বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও এই চাহিদা ছিল না।

    নৌকা ব্যবসায়ী মোহন সিংয়ের দাবি, তিনি প্রতিদিন প্রায় দেড়শোটি ফোন পাচ্ছেন। বিপুল চাহিদার চাপ মেটাতে মোহন সিংকে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।

    মোহন সিং-এর ছেলে চরণজিৎ সিং সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, "নৌকা এবং লাইফ জ্যাকেটের এত চাহিদা যে জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে। ব্যবসা ভাল হচ্ছে। তবে আমরা ছাড় দিচ্ছি, কারণ আমরা বুঝতে পারি যে এটি একটি মানবিক সংকট। আমরা লোকদের প্রত্যাখ্যান করতে চাই না।"

    এক একটি নৌকা ৮৫,০০০ টাকা থেকে ১.৮ লক্ষ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। লাইফ জ্যাকেটের দাম প্রায় ১,০০০ টাকা।

    নৌকার ক্রেতা গুরমিত সিং গুরুদাসপুরের ডেরা বাবা নানক থেকে রোপারে এসেছেন। গুরমিত তিন দিন আগে একটি নৌকা অর্ডার করেছিলেন। তাঁর কথায়, "ডেরা গুরুদ্বারা এই নৌকা কেনার ব্যবস্থা করেছে। অর্ডার তিন দিনের মধ্যে প্রস্তুত। তবে আমরা আরও অর্ডার দিচ্ছি। আমাদের অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বন্যার জল এখনও যোগাযোগকে কঠিন করে তুলছে। এটি গোটা সমাজকে সাহায্য করবে।"

    বন্যা কবলিত গ্রামগুলিতে নৌকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বেসামরিক নাগরিক, বাসিন্দা এমনকি গুরুদ্বারগুলিতেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা এবং জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেটের প্রয়োজনীয়তাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    মৃতের সংখ্যা ৪৩-এ পৌঁছেছেবন্যায় পাঞ্জাবে ইতিমধ্যেই ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। বন্যায় শত শত গ্রাম ডুবে গিয়েছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। পাঞ্জাবের মন্ত্রী হরদীপ সিং মুন্ডিয়ান বলেছেন যে, ২৩টি জেলার ১,৯০২টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে ৩.৮৪ লক্ষেরও বেশি বাসিন্দা সমস্যার সম্মুখীন।

    মোহালিতেও নৌকা প্রস্তুতকারকদের অর্ডার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনিল কুমার খুশওয়াহা, যিনি আগে প্রতি মাসে প্রায় ৫-৬টি নৌকা বিক্রি করতেন, সেই চাহিদা বেড়ে ১৫-১৬টি নৌকায় পৌঁছেছে, যার প্রতিটির দাম প্রায় ১.২ লক্ষ টাকা।

    পাঞ্জাবের দুর্দশা এখনও শেষ হয়নি, আবহাওয়া বিভাগ ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে।

    ১৯৮৮ সালে পাঞ্জাবের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যায় সেবার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
  • Link to this news (আজকাল)