• গো মহাকুম্ভে গোমূত্র–গোবরে চিকিৎসার দাবিতে বিতর্ক
    আজকাল | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: জয়পুরে চারদিনব্যাপী শুরু হয়েছে “গো মহাকুম্ভ”—যাকে আয়োজকেরা বর্ণনা করছেন “গাভী-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও প্রদর্শনী” হিসেবে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধিত এই অনুষ্ঠানে রাজস্থানের নানা প্রান্ত থেকে গোশালা, হিন্দুত্বপন্থী সংগঠন ও গাভী–পণ্য ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে দেবরাহা বাবা গো সেবা পরিবার, যা রুদ্রশিবম লাইভস্টক অ্যাসোসিয়েশন–এর একটি শাখা।

    গোমূত্রভিত্তিক ওষুধের দাবি করা হয়েছে এখানে। কোটার আইনজীবী প্রদীপ গুপ্ত, যিনি নিজেকে হিন্দুত্ব ভাবাদর্শের সমর্থক বলে পরিচয় দেন, গোমূত্রভিত্তিক নানা “ঔষধ” প্রদর্শন করছিলেন। তাঁর দাবি, ‘অর্জুন অর্ক’ হৃদরোগীদের জন্য, ‘নিরগুন্ডি অর্ক’ হাড়ের ব্যথার জন্য, ‘বরুণ গোক্খুরু অর্ক’ কিডনির অসুখের জন্য, আর ‘গো তীর্থ’ শ্বাসকষ্ট, সর্দি–কাশির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কার্যকর। গুপ্তর কথায়, “ভবিষ্যতে প্রত্যেকের বাড়িতে গরু থাকবে, কারণ গোমূত্র ও গোবর বিক্রি হবে লিটার/কেজি প্রতি ১০০ টাকায়।”

    রাজনৈতিক উপস্থিতিও ছিল উল্লেখ্য। এই মহাকুম্ভে যোগ দেন বিজেপি-র প্রবীণ নেতা ও রাজস্থানের প্রাক্তন রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ার, নগর উন্নয়ন ও গৃহনির্মাণ মন্ত্রী ঝবর সিং খারড়া এবং হাওয়া মহলের বিজেপি বিধায়ক বালমুকুন্দ আচার্য। প্রদর্শনীতে গোমূত্র–গোবরে তৈরি ওষুধ ছাড়াও বিক্রি হচ্ছিল—ঘি, দুধ, সার, গোবর প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র, গোবর দিয়ে তৈরি শিল্পকর্ম, কাগজ ও স্টেশনারি,প্রসাধনী সামগ্রী। পাশাপাশি “বেদিক পেইন্টস”–এর উদ্ভাবক মনোজ দুত প্রচার করছিলেন “গৌক্রিট” বা গোবর–ভিত্তিক প্লাস্টার। তাঁর দাবি, এটি বাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বাড়ির শক্তি বৃদ্ধি করে।

    আসারামের অনুসারীরাও সক্রিয় ছিল এখানে। প্রদর্শনীর এক কোণে ছিল “সন্ত শ্রী আসারামজি গোশালা নোয়াই”–এর স্টল। যদিও আসারাম বাপু বর্তমানে নাবালিকা ধর্ষণের মামলায় আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন, তাঁর অনুসারীরা গোমূত্র–গোবরে তৈরি ওষুধ বিক্রি করছিলেন এবং জানালেন প্রথম দিনেই তাদের প্রায় সব ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের বিরোধিতা করা হয় এখানে। সেমিনার হলে চেন্নাইয়ের পঞ্চগব্য বিদ্যাপীঠম–এর গুরুকুলপতি নিরঞ্জন কে. বর্মা আধুনিক বিজ্ঞানকে কটাক্ষ করে বলেন, “সনাতন ও বিজ্ঞান একই পথে চলতে পারে না। আধুনিক বিজ্ঞান ধ্বংসের অক্ষ, সনাতন নির্মাণের অক্ষ।” তাঁর দাবি, গোমূত্রে এমন সব উপাদান আছে যা আধুনিক রসায়ন তালিকাভুক্ত করতে পারেনি। এমনকি নোংরা ড্রেনের জলও গোমূত্র মিশিয়ে পানযোগ্য করা সম্ভব বলেও তিনি দাবি করেন।

    বৈজ্ঞানিক সমাজের প্রতিক্রিয়া এসেছে এই বিষয়ে। অনুষ্ঠানে গোমূত্রের “অসাধারণ গুণাগুণ” নিয়ে অনেক দাবি শোনা গেলেও কোনো চিকিৎসাগত প্রমাণ বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপিত হয়নি। বরং ২০২০ সালে ৫০০–এরও বেশি বিজ্ঞানী ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন গোমূত্র ও গোবরের “ক্যানসার সহ নানা রোগ নিরাময়ের বিশেষত্ব” নিয়ে গবেষণার আহ্বান প্রত্যাহার করতে। বৈজ্ঞানিক সমাজ স্পষ্ট বলেছে, এ ধরনের দাবি অবৈজ্ঞানিক। জয়পুরের গৌ মহাকুম্ভে গোমূত্র–গোবরে চিকিৎসার দাবি ও প্রদর্শনীর আড়ালে যেমন ধর্মীয়-রাজনৈতিক প্রচার প্রবল, তেমনই প্রশ্নচিহ্নও জোরালো হচ্ছে এই দাবিগুলির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে।
  • Link to this news (আজকাল)