আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডাইনি সন্দেহে বৃদ্ধা খুন। পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। এই ঘটনায় মেমারি থানার পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জানা গিয়েছে, মেমারী থানার গৌরীপুর মধ্যমপাড়া এলাকায় ডাইনী সন্দেহে এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা খুন হয়েছেন। শুক্রবার সকালে গ্রামসংলগ্ন জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় ওই বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মৃতার নাম লক্ষ্মী হেমব্রম (৭৫)। তিনি একাই বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেরই সনাতন কিস্কু নামে এক ব্যক্তি তাঁকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন। সম্প্রতি গ্রামে তাঁকে ‘ডাইনি’ বলে অপবাদ দেওয়া শুরু হয়। শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ ফুট দূরের একটি জলাশয় থেকে গলা ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপ-সহ তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। জানা গিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হল— সুজন ওরফে বিমল হাঁসদা, সন্দীপ মুর্মু, বিনয় হাঁসদা এবং সেবা ওরফে শিবা হাঁসদা।
ঘটনার খবর পেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানার্জীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। তিনি জানিয়েছেন, 'প্রাথমিক তদন্তে কুসংস্কারের বশবর্তী হয়েই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অনুমান। বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে জলাশয়ের কাছে খুন করা হয়েছে। তবে ডাইনী সন্দেহে খুন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কুসংস্কারপ্রসূত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। এই বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানার্জী বলেন,সুজন ওরফে বিমল হাঁসদা, সন্দীপ মুর্মু, বিনয় হাঁসদা এবং সেবা ওরফে শিবা হাঁসদা এই চারজন মিলে খুন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। অভিযুক্ত ৪ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আধুনিক এই যুগে দাঁড়িয়ে এখনও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বহু মানুষ। গত জুলাই মাসে বিহারের পূর্ণিয়াতে একই পরিবারের পাঁচজনকে ডাইনি অপবাদে পুড়িয়ে মারা হয়। মৃতদের মধ্যে ছিলেন তিনজন মহিলা ও দুজন পুরুষ। রাতভর এই হত্যাকাণ্ড চলেছিল বলে জানা যায়। পূর্ণিয়ার রাজ রানিগঞ্জ পঞ্চায়েতের টেটগামা গ্রামে এই ঘটনা ঘটার পর একমাত্র নিহতদের আত্মীয়রা ছাড়া বাদবাকি গ্রামবাসী পালিয়ে যায়। পুলিশের ভয়েই তারা পালিয়ে যায় বলে জানা যায়।
এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছত্তিশগড়ের বালোদাবাজারে ডাইনি অপবাদে ১১ মাস বয়সী একটি শিশু-সহ চারজনকে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনার পর পুলিশি তদন্তে উঠে আসে অভিযুক্তরা সন্দেহ করেছিল নিহতের পরিবার তাদের পরিবারের একজনের উপর 'কালা জাদু' প্রয়োগ করেছিল। যে কারণে পরিবারের ওই সদস্যের শরীর কিছুতেই ভালো হচ্ছে না।