৩৩ বছর কারাগারে কাটিয়ে মূলস্রোতে সুব্রত, জীবিকার ব্যবস্থা করল প্রশাসন
প্রতিদিন | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিরুফা খাতুন: ১৯ বছর বয়সে খুনের দায়ে জেল। যাবজ্জীবন সাজা পায় দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা সুব্রত সরকার। দীর্ঘ ৩৩ বছর কাটিয়েছে অন্ধকারে। তবে সংশোধনাগারে তার ভালো ব্যবহার মুক্তির সুযোগ করে দিয়েছে। ফিরে পিয়েছে সামাজিক জীবন। কিন্তু জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় জেলে কাটানোর পর, কী করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তা নিয়ে দুশ্চিতা ছিলই। এবার তার পাশে দাঁড়ালো প্রশাসন।
সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, অটো কিনতে সাহায্য করল জেলা প্রশাসন ও প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার, তার হাতে তুলে দেওয়া হল অটো। এখন থেকে রাসবিহারি থেকে বেহালা রুটে রোজ অটো চালাবে সে।
সেদিনের তরুণ আজ, ৫২ বছরের প্রৌঢ়। ৩৩ বছর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের গারদে কাটিয়ে সামাজিক জীবন থেকে বিছিন্ন দশা তার। কিন্তু তাকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন। কিন্তু জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে দরকার জীবিকা। কিন্তু এতবছর সংশোধনাগারে কাটানো যাবজ্জীবন সাজা কাটানো আসামীকে চাকরি দেবে কে? তাই পাশে দাঁড়াল কর্তৃপক্ষ। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে তাকে অটো কিনতে সাহায্য করল প্রশাসন। সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সাহায্যে বানিয়ে দেওয়া হল ভোটার, আধার-সহ অন্য প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সংশোধনাগার প্রশাসন বিভাগের মনোজকুমার রায় বলেন, “সুব্রতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে ওর ভালো আচরণের কারণে সাজা কমিয়ে ৩৩ বছর করা হয়। আমরা অনুমান করেছিলাম, মুক্তির পরে সুব্রত বাধার সম্মুখীন হতে পারে। তাই সরকারি সহায়তায় আমরা ওর আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করেছি। ও আগে আমাদের বলেছিল গাড়ি চালাতে পারে। তাই অটো চেয়েছিল। আমরা অটো কিনতে ওকে সাহায্য করেছি। ওর ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল।”
একসময়ে বন্দিজীবন কাটনো এখন খোলা বাতাসে শ্বাস নেওয়া সুব্রত সরকার বলেন, “আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম একদিন সমাজে ফিরে আসব। এই নতুন জীবন দেওয়ার জন্য আমি জেল কর্তৃপক্ষ ও ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজকের দিন আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। সংশোধনাগার থেকে যারা ফিরে এসেছে বা আসবে তাদের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন আর কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে।”