• হাল ফেরার মাঝেই স্কুলে বিষাদের সুর
    আনন্দবাজার | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভোল পাল্টেছে স্কুলের। তার মধ্যেই, আদালতের নির্দেশে স্কুলের কয়েক জন করে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী চাকরিহারা হয়েছেন। ফলে, স্কুল চালানোই সমস্যার হয়ে উঠেছে। শিক্ষক দিবসে তাই দুর্গাপুরের দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের গলায় বিষাদের সুর।

    নেপালিপাড়া হিন্দি হাই স্কুলে (উচ্চ মাধ্যমিক) ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন কলিমুল হক। তখন স্কুলে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য একটিই শৌচাগার ছিল। এখন ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য ১০টি করে শৌচাগার রয়েছে। তখন পড়ুয়া সংখ্যা ছিল হাজার দুয়েক। এখন তা চার হাজার ছাড়িয়েছে। স্কুল ভবন ঝকঝকে হয়েছে। স্মার্ট বোর্ডে ক্লাস হয়। স্কুলের ছাদে যে ‘কিচেন গার্ডেন’ তৈরি হয়েছে, তা সারা দেশে মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে। স্কুলের ভোল পাল্টে কলিমুল ২০১৯ সালে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পান। ২০২০ সালে পান রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। স্কুলটি ২০১৯ সালে ‘যামিনী রায় পুরস্কার’ ও ২০২২ সালে ‘স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার’ পায়।

    কিন্তু সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের যে প্যানেল বাতিল হয়েছে, তাতে এই স্কুলের আট জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তিন শিক্ষাকর্মী চাকরিহারা হয়েছেন। কলিমুল জানান, নিয়ম অনুযায়ী ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা। এখন রয়েছেন মাত্র ২৫ জন। ফলে, সুষ্ঠু ভাবে স্কুল চালানোই মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠে ২০১৯ সালে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন জইনুল হক। তখন স্কুলে পাঁচিল ছিল না, আগাছায় ভরা ছিল চত্বর। কয়েক মাস পরেই দেশে লকডাউন হয়। সেই পরিস্থিতিতে, কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে স্কুলের জঙ্গল সাফ, পাঁচিল তৈরি, ভবন সংস্কারে নেমে পড়েন তিনি। স্কুল চত্বরে ফুল-আনাজের বাগান, খেলার মাঠ সংস্কার হয়। পর্যাপ্ত শৌচাগার, পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। তৈরি হয়েছে ‘এআই ল্যাবরেটরি’। মেয়েদের ফুটবল দল গড়া হয়েছে। তা মহকুমার অনূর্ধ্ব ১৪ ও ১৬ বিভাগের লিগে খেলছে।

    স্কুল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রছাত্রী এক হাজারের বেশি। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকা ১৫ জন। প্রধান শিক্ষক জানান, ৩৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকার কথা। তার উপরে, চাকরি হারিয়েছেন দুই শিক্ষক ও দু’জন শিক্ষাকর্মী। শিক্ষাকর্মীর কাজ কার্যত সামলাতে হচ্ছে তাঁকেই।

    কলিমুল ও জইনুল জানান, সবাই হাত লাগিয়ে স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে চলতে চান তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ এত জন সহকর্মী চাকরি হারানোয়, তাঁদের অভাব ভীষণ ভাবে অনুভব করছেন। শিক্ষক দিবসের আগে তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা স্কুল ছাড়ার পরে, প্রথম বার শিক্ষক দিবস পালন হচ্ছে। সহকর্মী থেকে ছাত্রছাত্রী, কেউ কিন্তু ওঁদের ভোলেননি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)