ভৌতিক! একই সাপ তেরো বার কামড়াল, 'কোনওমতেই পিছু ছাড়ছেনা সে', তরুণীর দাবি ঘিরে চোখ ছানাবড়া সবার ...
আজকাল | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশের কৌশাম্বি জেলার একটি ছোট গ্রাম বসতি ভাইসা। বর্তমানে এটি এক অদ্ভুত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার কারণে আতঙ্কে রয়েছে। গ্রামের এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরী দাবি করেছে, গত ৪০ দিন ধরে তাকে একটি কালো সাপ কমপক্ষে ১৩ বার কামড়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ওই একই সাপ বারবার তাকে টার্গেট করছে। তার কথায়, 'একটি কালো সাপ আমার প্রাণের পেছনে লেগে আছে। দয়া করে আমাকে বাঁচান। প্রতিবার কামড়ালে মনে হয় বিদ্যুৎ ঝাঁকুনি লাগছে, আর শরীরে দাঁতের দাগও থেকে যাচ্ছে।' আর এই ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি এলাকায় হুলুস্থুল।
তরুণী ও তার পরিবার জানায়, তারা রাতে দরজা বন্ধ করেও সাপের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কখনও সেই সাপ ঘরের ভিতরে, কখনও বাইরে- সাপটি যেকোনও সময় এসে তাকে কামড়াচ্ছে। মেয়েটির দাবি, প্রতিবার কামড়ানোর সময় সে সাপটিকে দেখেছে এবং সাপের কামড়ের এই ছাপই প্রমাণ যে এটি বাস্তব।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির বাবা রাজেন্দ্র একজন দিনমজুর। তিনি জানান, প্রথম সাপে কামড়ের ঘটনা ঘটে ২২ জুলাই। এরপর থেকে তরুণীর চিকিৎসার পেছনে তাঁরা ৪ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করেছেন। রাজেন্দ্র বলেন, 'আমরা সাপ ধরার লোক ডাকিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ আসেনি। কখনও সাপটি খেতে লুকায়, আবার কখনও ঘরে চলে আসে। আমরা জানি না এই দুর্ভোগ আর কতদিন চলবে।'
গ্রামে প্রায় ৩০০ জনের বাস। সেখানে বেশিরভাগ বাড়িই কাঁচা মাটির তৈরি। বৃষ্টির সময় এসব ঘরে জল জমে যায়, স্যানিটেশনও খারাপ। ফলে বর্ষার মৌসুমে সাপের আনাগোনা খুবই সাধারণ বিষয়। এহেন পরিবেশ হয়তো সাপের উপস্থিতি ক্রমে বাড়িয়ে তুলেছে।
তবে পরিবারের বারবার দাবি সত্ত্বেও গ্রামের অন্য কেউ এখনও সেই সাপটিকে দেখেনি। এক প্রতিবেশী বলেন, 'আমরা শুধু মেয়েটির পরিবারের কাছ থেকেই সাপের কথা শুনেছি। সত্যি বলতে আমরা ভয়েই এই বিষয়ে কথা বলি না -যদি আমাদের পেছনেও পড়ে যায়!'
তরুণীর পরিবার অতিরিক্ত ভয়ের কারণে তার ছোট ভাইবোনদের আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। খবর অনুযায়ী তরা স্থানীয় এক তান্ত্রিকের কাছেও গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তরুণীর এক ফুফু (পিসি) বলেন, 'আমি একবার সাপটিকে দেখেছি- মোটা, কালো, আর হাতে যতটুকু লম্বা হয় ঠিক ততটুকু। সাপটা একবার নয়, একাধিকবার কামড়িয়েছে- আমি নিশ্চিত।'
যদিও পরিবারের এবং কয়েকজন গ্রামবাসীর বিশ্বাস, একই সাপ বারবার কামড় দিচ্ছে, চিকিৎসকরা বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। কৌশাম্বির চিফ মেডিক্যাল অফিসার (CMO) ডঃ সঞ্জয় কুমার জানান, ২২ জুলাই এবং ১৩ আগস্ট মেয়েটিকে সাপের কামড় সন্দেহে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ১৩ বার কামড়ানোর কোনও চিকিৎসাগত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ডঃ কুমার বলেন, 'ওই বাড়িটি কাঁচা মাটির তৈরি এবং বর্ষাকালে সাপ এ ধরনের ঘরেই আশ্রয় নেয়। তাই ওই এলাকায় ভালোভাবে পরিষ্কার এবং ওষুধ ছিটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
সিরাথু কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের (CHC) চিকিৎসক ডঃ অরুণ কুমার, যিনি মেয়েটির চিকিৎসা করেছেন, জানান, কামড়ের জায়গায় বিষাক্ত সাপের স্বাভাবিক দাঁতের দাগ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, 'বিষাক্ত সাপ ছিল কি না তা নিশ্চিত বলা যায় না। আমরা ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছি, এবং এখন সে স্থিতিশীল আছে।'
কিছু চিকিৎসক মনে করছেন, এই ঘটনার পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। কৌশাম্বি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ হরিওম কুমার সিং বলেন, 'একই সাপ এক ব্যক্তিকে এতবার কামড়িয়েছে, এমন কোনও চিকিৎসাগত নজির নেই। এটা সম্ভবত স্নেক ফোবিয়ার একধরনের রূপ -যেখানে রোগী মনে করে, সাপ তাকে টার্গেট করছে বা কামড়াচ্ছে।'
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো গ্রামে সম্প্রতি চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণীর পরিবার বাস্তবিক হুমকি বলেই বিষয়টি দেখছে, তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি হতে পারে ভয় ও মানসিক ভ্রমের ফল। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।