মুম্বই: আবারও ৪০০ কেজি আরডিএক্স! সেই মুম্বইতেই। রাত পোহালে অনন্ত চতুর্দশী। ১০ দিনের গণপতি উৎসব শেষে বিসর্জনের পালা। শনিবার জনসমুদ্রের চেহারা নেবে বাণিজ্যনগরী। তার ঠিক আগেই ১৯৯৩ সালের মুম্বই (তৎকালীন বম্বে) ধারাবাহিক বিস্ফোরণের স্মৃতি উস্কে এল হুমকি— মজুত ৪০০ কেজি আরডিএক্স। ৩৪টি গাড়িতে প্রস্তুত ‘মানববোমা’রা। বাণিজ্যনগরীতে ঢুকে পড়েছে ১৪ জন পাকিস্তানি জঙ্গি। বিসর্জনের ভিড়ের মধ্যেই একের পর এক বিস্ফোরণে ‘কেঁপে’ উঠবে মুম্বই। এক কোটি মানুষের মৃত্যু হবে! নাশকতার এই গোটা ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছে ‘লস্কর-ই-জেহাদি’।
শুক্রবার মুম্বই ট্রাফিক পুলিসের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এসেছে এই মেসেজ। সঙ্গে সঙ্গেই শহরজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে দেয় মুম্বই পুলিস। উৎসবের মধ্যেই এমন হুমকিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা বাণিজ্যনগরীতে। পুলিস জানিয়েছে, শনিবারের গণেশ বিসর্জন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা মুম্বই। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে চলছে তল্লাশি। জঙ্গি দমন শাখা (এটিএস) সহ অন্যান্য এজেন্সিগুলিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে পুলিসের আর্জি, ‘সন্দেহজনক কোনও গতিবিধি চোখে পড়লেই খবর দিন। তবে কোনও রকম গুজবে কান দেবেন না।’ নাশকতার এই হুমকি ভুয়ো, নাকি সত্যিই বড় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে, জানতে তদন্ত শুরু করেছে অপরাধ দমন শাখা।
অতীতেও ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও জঙ্গি হামলার জেরে মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী হতে হয়েছে মুম্বইকে। ১৯৯৩ সালে ১২টি জায়গায় পরপর বিস্ফোরণের জেরে ২৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নেপথ্যে ছিল কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম। সেবছরের গোড়াতেই চোরাপথে দেশের বাণিজ্য রাজধানীতে ঢুকে পড়েছিল প্রায় তিন টন আরডিএক্স। তার মধ্যে ২,৩০০ কেজি হাতে এসেছিল তদন্তকারীদের। বাকি ৪০০ কেজি আরডিএক্সের খোঁজ আজও মেলেনি। শুধু তা-ই নয়, সেবার নাশকতা চালাতে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিল ১৯ জন জঙ্গি। দু’টি বিষয়েরই মিল রয়েছে এদিনের হুমকির সঙ্গে। তাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
২০০৬ সালেও মুম্বইতে লোকাল ট্রেনের কামরায় একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে। সব মিলিয়ে ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়। ঠিক দু’বছর পর ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর সমুদ্রপথে বাণিজ্যনগরীতে ঢুকে তাণ্ডব চালায় ১০ পাকিস্তানি জঙ্গি। মৃত্যু হয় ১৭৫ জনের। এই প্রেক্ষিতেই গণপতি বিসর্জনের মধ্যে জঙ্গি হামলার হুমকির খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভয়ে কাঁপছে ‘আমচি মুম্বই’। পুলিসের এক শীর্ষকর্তা সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘বাহিনীকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। যে কোনও রকম বিপদ মোকাবিলার দক্ষতা আমাদের বাহিনীর রয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। আমরা শহরের সর্বত্র তল্লাশি চালাচ্ছি। পার্কিং প্লেস থেকে বেসমেন্ট— কিছুই বাদ রাখা হচ্ছে না।’
পুলিস সূত্রে খবর, গোটা মুম্বই শহরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে। রাস্তায় নামানো হচ্ছে ২১ হাজার পুলিসকর্মীকে। এর মধ্যে ১২ জন অতিরিক্ত পুলিস কমিশনার, ৪০ জন ডেপুটি পুলিস কমিশনার, ৬১ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, তিন হাজার অফিসারও রয়েছেন। রুট ম্যানেজমেন্ট ও ট্রাফিক সংক্রান্ত আপডেট দিতে এবারই প্রথম এআইয়ের ব্যবহার করছে প্রশাসন।