• চাঁচলের কলিগ্রামে রায়চৌধুরীদের পুজোয় জড়িয়ে নবাব আমলের গল্প
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • উজির আলি  চাঁচল

    মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে শুরু হয় চাঁচল এক নম্বর ব্লকের কলিগ্রামের রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো। প্রায় আড়াই শতকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই পুজোয় কেবল ধর্মীয় আচার নয়, জড়িয়ে আছে নবাব আমলের ইতিহাসও। আজও নিষ্ঠা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পুজো হয়ে চলেছে রায়চৌধুরী বাড়িতে। 

    কথিত, বাংলার তৎকালীন নবাব আলিবর্দি খাঁয়ের খাজাঞ্চি ছিলেন কলিগ্রামের বদররাম রায়চৌধুরী। সেসময় এলাকায় ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছিল। কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় সম্ভব হয়নি। নবাবের কাছে খাজনা পৌঁছে দিতে না পারায় চরম শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল বদররামকে। শাস্তি হিসেবে আধমরা অবস্থায় বাক্সবন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ভাগ্যের লিখন ছিল অন্য। নদীর তীরে তাঁর গোঙানির শব্দ শুনে কয়েকজন সাধু তাঁকে উদ্ধার করেন। তিনি প্রাণ ফিরে পান। সাধুদের প্রচেষ্টা এবং দেবী দুর্গার কৃপায় তিনি জীবিত, এই বিশ্বাস গড়ে ওঠে বদররামের মনে। 

    পরে স্বপ্নাদেশেও আসেন দুর্গা। বদররাম নিজের বাড়িতে একচালা ছাউনির নীচে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই থেকেই রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু। পরে বদররামকে জীবিত দেখে বিস্মিত হন নবাব আলিবর্দি। এবং পুরস্কার হিসেবে ভাণ্ডারিয়া, মালচা, গালিমপুর সহ মোট পাঁচটি পরগনা দান করেন বদররামকে। পরিবারের উত্তরসূরি সৌমেন রায়চৌধুরীর কথায়, ‘এই পুজো বর্তমানে সাত পুরুষের। আগে কড়িবর্গার তৈরি একটি মন্দির ছিল। এখন তা ভেঙে নতুন দালান নির্মাণ করা হয়েছে। দেবীর জমির ফসল বিক্রির অর্থ ও পরিবারের তহবিলে পুজো হয়। তবে রাজ্য সরকারের অনুদান মিললে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আয়োজন সহজ হবে।’ পরিবারের আর এক সদস্য গৌতম রায়চৌধুরী বলেন, ‘বদররাম রায়চৌধুরীর উদ্যোগে শুরু হওয়া এই পুজো এখনও একইভাবে হচ্ছে। তবে আগে বলি দেওয়া হলেও এখন সেই প্রথা উঠিয়ে দশমীতে মোহনভোগ দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।’ এই পুজোয় রয়েছে একাধিক বৈশিষ্ট। দুর্গাকে সাজানো হয় ডাকের সাজে। বাহন সিংহ হল শ্বেতশুভ্র। যা পুজোকে আলাদা মাত্রা দেয়। নবমীতে কুমারী পুজো। প্রতিপদ থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত উপাচার পালনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন পরিবারের বধূরা। -ফাইল চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)