• মহাষ্টমীর অঞ্জলি-গুচিয়াপাতায় ভোগ, বনবাসীর পুজোয় আমন্ত্রিত পর্যটকরা
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস  লাটাগুড়ি

    পুজোয় ডুয়ার্সে বেড়াতে এসে মহাষ্টমীর অঞ্জলি কোথায় দেবেন, তা নিয়ে চিন্তা? মুশকিল আসান করেছে বনদপ্তর। লাটাগুড়ি থেকে কিছুটা দূরে বিচাভাঙা বনবস্তির পুজোয় আমন্ত্রিত পর্যটকরা। ঢাক নয়, ধামসা-মাদলের তালে উমা আরাধনা হবে সেখানে। লালপেড়ে শাড়ি আর খোঁপায় বুনো ফুল গুঁজে পুজোর আনন্দে মাতবেন বনবস্তির মহিলারা। গোরুমারার জঙ্গল ঘেরা এই পুজো আক্ষরিক অর্থেই আলাদা। এখানে প্যান্ডেলের চাকচিক্য নেই। নেই আলোর বাহার কিংবা লাউড স্পিকারের কান ফাটানো শব্দ। এই পুজোর পরতে পরতে প্রাণের ছোঁয়া। শুধু মহাষ্টমীর অঞ্জলি নয়, পুজোর দিনগুলিতে গুচিয়াপাতা (দেখতে কচি কলাপাতার মতো) কিংবা শালপাতায় খিচুড়ি ভোগের ব্যবস্থাও থাকছে পর্যটকদের জন্য। থাকছে সন্ধ্যার পর বনবাসীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগও। যা বিশেষ করে কলকাতার পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।

    গোরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, ‘বনদপ্তরের সহায়তায় এতদিন বিচাভাঙায় বনবাসীরা নিজেদের মতো করে পুজো করতেন। কিন্তু ফি বছর দেখা যায়, পুজোয় জঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকেই মহাষ্টমীর অঞ্জলি দিতে না পেরে কিংবা ভোগ না পেয়ে আফশোস করেন। সেজন্য বনবাসীদের পুজোর সঙ্গে পর্যটকদের একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলের পরিবেশে বনবাসীরা কীভাবে উমা আরাধনায় মাতেন, তা চাক্ষুষ করার পাশাপাশি ওই পুজোয় অঞ্জলি দেওয়া থেকে পর্যটকদের জন্য ভোগের ব্যবস্থাও থাকছে এবার। চাইলে সন্ধ্যার পর তাঁরা পুজো মণ্ডপে বনবস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন।’

    গোরুমারা জঙ্গল লাগোয়া বিচাভাঙা, চাটুয়া, সুরসুতি, মূর্তি, পানঝোরা, কালীপুরের মতো বেশ কিছু বনবস্তি রয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন এখানকার বাসিন্দাদের মন খারাপ নিয়েই কাটাতে হতো পুজোর ক’টা দিন। সন্ধ্যা নামলে পথে বন্যপ্রাণীর ভয়। ফলে মা দুর্গাকে দর্শন করতে হলে সকাল সকাল বেরিয়ে শহরের পুজো মণ্ডপ ঘুরে আবার ফিরে আসতে হতো অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগে। এতে মন ভরত না তাঁদের। ফলে জঙ্গলেই দুর্গাপুজো করার জন্য বনবাসীরা আবদার করেন বনকর্তাদের কাছে। সম্মতি মিলতেই নিজেদের মতো করে দুর্গাবন্দনায় মাতেন তাঁরা। বিচাভাঙার পুজোয় আজও বজায় রয়েছে জঙ্গলবাসীর নিজস্বতা।

    পাহাড়ি নদী, জঙ্গল, বন্যপ্রাণ আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের টানে পুজোয় যাঁরা গোরুমারায় বেড়াতে আসছেন, তাঁদের কাছে বন-দুর্গার এই পুজো নিঃসন্দেহে বাড়তি পাওনা। বর্ষার জলে তরতাজা সবুজ জঙ্গলের স্নিগ্ধ ছায়ায় প্রাণের আরাম মিলবে বনবাসীদের এই পুজোয়। লাটাগুড়ি হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘পুজোর সময় কলকাতা থেকে প্রচুর পর্যটক গোরুমারার জঙ্গলে বেড়াতে আসেন। তাঁরা জঙ্গলে বনবস্তিবাসীর পুজোয় সামিল হতে পারবেন। দিতে পারবেন অঞ্জলি। মিলবে ভোগ। পর্যটকদের কাছে এটা সত্যিই বাড়তি পাওনা। যা ডুয়ার্সে পুজোর পর্যটনে নয়া পালক যোগ করবে বলে আমরা মনে করি।’
  • Link to this news (বর্তমান)