• পুজোর ছুটিতে ডুয়ার্সে দেখা যাবে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধকে’! আগ্রহী পর্যটকরা
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পুজোর ছুটি থেকেই কার্যত বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার মরশুম শুরু হয়। তার আগে পর্যটনস্থলের হোটেল, রেস্তরাঁ, গেস্ট হাউসগুলি সেজে ওঠে অতিথি আপ্যায়নের জন্য। কিন্তু কখনও কখনও স্বয়ং প্রকৃতি পর্যটকদের জন্য অপার সৌন্দর্য সাজিয়ে দেয়! আসন্ন পুজোর ছুটিতে যাঁরা ডুয়ার্সে যাচ্ছেন, তাঁরা এমনই এক অপার্থিব দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারবেন। কারণ, শিলিগুড়ি তো বটেই, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকা, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, এমনকী বিহারের কিষানগঞ্জ থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’। বৃষ্টির ফলে বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার উপস্থিতি কমতেই উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আকাশসীমায় সকাল-বিকেল দেখা দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। শুধু কি তাই! দার্জিলিং থেকে প্রায় ১৫০ কিমি দূরে, বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা থেকেও দেখা মিলছে চিরতুষারাবৃত শৃঙ্গের। ভোরের নরম আলো, বিকেলের কোমল সূর্যরশ্মি গায়ে মেখে ধরা দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। দীর্ঘদিন পর এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে যারপরনাই খুশি পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারাও। অনেক পর্যটক এখনই  পাহাড় থেকে অনেক দূরে সমতলের জেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা উপভোগ করছেন। ছবি তোলার জন্য ভিড় জমছে। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও, রিলসের ছড়াছড়ি। উত্তর ২৪ পরগনার এক বাসিন্দা বীরেশ্বর দাস বলেন, পুজোর সময় উত্তরবঙ্গ ঘুরতে যাচ্ছি পরিবারকে নিয়ে। গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি, ডুয়ার্স থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর। উত্তরবঙ্গে জঙ্গল-বন্যপ্রাণী সহ যদি সাদা চাদরে মোড়া ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’র দর্শন মেলে, তাহলে পূর্ণ হবে ষোলো কলা।   

    সিকিমের আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘বৃষ্টিতে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কমেছে। তাই বেড়েছে দৃশ্যমানতা। তাই মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে সমতল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।’ একই বক্তব্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র’র। তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে দূষণ অনেকটাই কমেছে। বৃষ্টির কারণে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণও কমেছে।’ 

    পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও। জানা গিয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ের আকাশে উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা, আটোয়ারি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছবি মোবাইল বন্দি করার হিড়িক পড়েছে। ওপার বাংলার সংবাদমাধ্যমে খবর, করতোয়া সেতু পার করলেই কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে যতে হচ্ছে। সেই দৃশ্য উপভোগ করতে থমকে যাচ্ছে যানবাহন। শ্বেতশুভ্র শৃঙ্গ সূর্যের আলোয় কখনও সোনালি, কখনও রূপালি, কখনও আবার গোলাপি আভায় ঝলমল করছে। অপূর্ব সেই দৃশ্য দেখার সুযোগ কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছেন না দার্জিলিং থেকে ১৩০ কিমি দূরের ইসলামপুর বা ১৬০ কিমি দূরের কিষানগঞ্জের বাসিন্দারা।

    গোপীনাথবাবু আরও বলেন, ‘পাহাড় ও সংলগ্ন অঞ্চলে বর্ষার বৃষ্টি বাকি আছে এখনও। অর্থাৎ, ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ আরও কিছুটা কমবে। ফলে কিছুদিন পর সমতল থেকে আরও স্বচ্ছভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলতে পারে। অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এই দৃশ্য দেখা যেতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে মেঘমুক্ত আকাশ ও দৃশ্যমানতার উপর।’ অর্থাৎ, প্রকৃতি সায় দিলে পুজোর ছুটিতে উত্তরবঙ্গে যাওয়া পর্যটকরা এই দৃশ্য চাক্ষুষ করার সুযোগ পেতেই পারেন। -নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)