সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: শক্তিগড়ের উজ্জ্বল সঙ্ঘ ও শৈলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারের পুজো প্রত্যেক বছরই শিলিগুড়িতে থিমের চমকে নজরকাড়ে। এবারও এই দু’টি পুজোর থিমে রয়েছে অভিনবত্ব। এক জায়গায় দেখা মিলবে ডিজনির জনপ্রিয় মিকি মাউস, মিনি, এলসা, আনা, বেল, স্নো হোয়াইটের মতো প্রিন্সেস, মার্ভেল, স্টার ওয়ার্স, টয় স্টোরি ইত্যাদি চরিত্র। আর এক জায়গায় বিজ্ঞানের সঙ্গে আধ্যাত্বিক যোগ।
শক্তিগড় হাইস্কুলের উল্টোদিকে বড় মাঠে উজ্জ্বল সঙ্ঘের পুজো হচ্ছে। এবার এদের থিম ‘ডিজনিল্যান্ড’। ১০০ ফুট উঁচু এই মণ্ডপের সামনে তৈরি হচ্ছে ডিজনির বিখ্যাত থিম পার্ক। মণ্ডপের ভিতরে সাবেকি আধ্যাত্মিক পরিবেশ, বাইরে ডিজনির কার্টুন চরিত্র থাকাবে, জানান পুজো কমিটির সম্পাদক বুদ্ধ রায়। তিনি বলেন, মণ্ডপসজ্জার ক্ষেত্রে থিম ডিজনিল্যান্ড হলেও প্রতিমায় আমাদের সাবেকিয়ানা থাকবে।
অন্যদিকে, শৈলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারের থিমে রয়েছে কিছুটা নতুনত্ব। এই পুজোর থিমের নাম ‘ধর্মের ডিএনএ’। এই নাম শুনে সকলের কৌতূহল হচ্ছে এ আবার কেমন থিম! ক্লাবের অন্যতম কর্তা কৌশিক দত্ত বলেন, ধর্মের ডিএনএ বলতে আমরা বোঝাতে চাইছি, মাতৃজঠর থেকেই মানুষের আধ্যাত্মিক টান তৈরি হয়। কীভাবে জন্মের পর থেকে মানুষের মধ্যে ভক্তি, প্রেম, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মায়ের নাড়ির সংস্পর্শ থেকে আসে সেই পর্যায়গুলি এখানে তুলে ধরা হবে। মণ্ডপে ঢুকেই দেখা যাবে মাতৃজঠরের মডেল। মা দুর্গার একই শরীরে এখানে দু’টি রূপ থাকবে। অর্ধাংশ মা অর্থাৎ মানবী, আর এক অর্ধাংশে দেবী রূপ। প্রতিমা শব্দকে ভেঙে আমরা বোঝাতে চাইছি প্রতি-মা। প্রত্যেক মায়ের মধ্যেই আধ্যাত্বিক গুন রয়েছে। মায়ের নাড়ির টান থেকে আধ্যাত্মিক দিকগুলি আমরা সকলে পেয়ে থাকি। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে সেই বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে প্রকাশ পায় সেটাই তুরে ধরা হবে। এই থিম ফুটিয়ে তুলতে ডিএনএ’র বৈজ্ঞানিক গঠনের অনুকরণে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মডেলে সেজে উঠবে মণ্ডপ।
এ ধরনের থিম করার কারণ প্রসঙ্গে কৌশিকবাবু বলেন, পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণা মানুষের মধ্যে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। অতি বিজ্ঞানমনস্কতায় আধ্যাত্মিকতাকে মানুষ অস্বীকারও করছে। কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও সুন্দর জীবনের জন্য আধ্যাত্মিক দিকটি অস্বীকার করা যাবে না। বিজ্ঞান উন্নত হলেও তার সঙ্গে আধ্যাত্বিক যোগ রয়েছে। সেই কথাই মানুষকে আমরা স্মরণ করাতে চাই।