হাটখোলা দুর্গাবাড়িতে কালজানি, গঙ্গার জলে হয় মায়ের মহাস্নান, কলকাতা থেকে আসছে বেনারসী
বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: রায়গঞ্জের কালো নুনিয়া চালে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত হবে মায়ের অন্নভোগ। মা মৃন্ময়ীর মহাস্নান হবে কালজানি ও গঙ্গা জলে। প্রাচীন ঐতিহ্য, নিষ্ঠা ও শাস্ত্রীয় অনুশাসন মেনে এবারও ঐতিহ্যবাহী আলিপুরদুয়ার হাটখোলা দুর্গাবাড়ির পুজোর আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে।
আলোর রোশনাই নেই। নেই জেল্লা। মণ্ডপ বলতে দুর্গাবাড়ির স্থায়ী নাটমন্দির। সেই নাটমন্দিরেই মায়ের প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় মৃৎশিল্পী মিঠুন পালের সঙ্গে কৃষ্ণনগরের শিল্পীরা এসে মূর্তি গড়ার কাজ করছেন। আগে দুর্গা প্রতিমার উচ্চতা প্রতিবছর এক ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পেত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে সেই প্রথা তুলে দেওয়া হয়।
দুর্গাবাড়ির পুজোটি আগে শহরের সওদাগড়পট্টিতে ছিল। কিন্তু সেই নামটি আজ বিলুপ্ত। শহরের আজকের সারাংপট্টি এলাকাটিই অতীতে সওদাগড়পট্টি নাম ছিল। সেই সওদাগড়পট্টি থেকে পুজোটি পরে আলিপুরদুয়ার হাটখোলা দুর্গাবাড়িতে চলে আসে। শহরের এই ঐতিহ্যবাহী পুজোটি এবছর ১২৯ বছরে পড়ল। জেলা শহরের অন্যান্য বারোয়ারি পুজো দেখার পরেও দুর্গাবাড়ির পুজোয় মায়ের মুখ দর্শন না করলে শহরের ভক্তদের মানসিক শান্তি হয় না। এমনই মহিমা ও বৈশিষ্ট্যএখানকার পুজোর। তাই অনেকেই শহরে ঠাকুর দেখা শুরু করেন দুর্গাবাড়ির পুজোয় মায়ের মুখ দর্শন করে। কেউ কেউ আবার প্রথমে শহরের বারোয়ারি পুজোমণ্ডপ ঘুরে শেষে দুর্গাবাড়ির পুজোয় মায়ের মুখ দর্শন করে নাটমন্দিরে জিরিয়ে নেন।
আলিপুরদুয়ার হাটখোলা দুর্গাবাড়ি মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত রায়গঞ্জের কালো নুনিয়া চালে মায়ের অন্নভোগ দেওয়া হবে। মায়ের বেনারসী আসছে কলকাতা থেকে। গঙ্গাজল এসে পৌঁছেছে। পবিত্র গঙ্গা ও কালজানির জল মিশিয়ে মায়ের মহাস্নান হবে। পুজোর পদ্মফুল আসবে কোচবিহারের গোসানিমারি থেকে। মায়ের জন্য ঘি আসে কামাখ্যাগুড়ি থেকে। এবারও সেই প্রথার কোনও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
অষ্টমীতে অঞ্জলি দিতে গোটা শহর থেকে ভক্তরা দুর্গাবাড়িতে আসেন। তখন হাটখোলায় তিলধারনের জায়গা থাকে না। পুজো উপলক্ষ্যে দুর্গাবাড়ি চত্বরে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মেলা বসে। মেলার কারণে পুজো যেন আরও জমজমাট হয়েওঠে।দশমীর দিন পান্তা ভাত খাওয়ানো হয়। তারপরেই মায়ের বিসর্জন হয়। শহরে শোভাযাত্রা করে মায়ের বিসর্জন দেওয়া হয় কালজানি নদীতে।
দুর্গাবাড়ি পুজো কমিটির সভাপতি রণজিৎ রায় বলেন, আমাদের এখানে সাবেকি নিষ্ঠা, ভক্তি ও শাস্ত্রঅনুসারে মায়ের পুজো হয়। এই নিষ্ঠা ও ভক্তির টানেই ভক্তরা আমাদের মন্দিরে আসেন। নিজস্ব চিত্র।