ধর্ষিতার মুখ বন্ধ করতে সালিশি, ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব!
বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, বালুরঘাট: ৪০ হাজার টাকা। যুবতীর ‘ইজ্জতের দাম’। একাধিকবার প্রতিবেশী যুবকের লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পর সঠিক বিচার নয়, বরং টাকার বিনিময়ে ‘মিটমাট’ করে নেওয়ার নিদান দিলেন গ্রামের মাতব্বররা। ঘটনাটি বালুরঘাটের জলঘর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। যদিও নির্যাতিতার পরিবার গ্রামের মাতব্বরদের নিদানের সামনে মাথা নত করেননি। সুবিচারের আশায় বালুরঘাট থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত যুবক অবশ্য বেপাত্তা।
বছর বাইশের ওই নির্যাতিতা বিশেষভাবে সক্ষম। তাঁর বাবা-মা পরিযায়ী শ্রমিক, দিল্লিতে থাকেন। যুবতী অনেকদিন ধরে দিদার কাছে থাকেন। অভিযোগ, বাড়ি ফাঁকা পেয়ে বিশেষভাবে সক্ষম ওই যুবতীর উপর যৌন নির্যাতন চালায় প্রতিবেশী এক বিবাহিত যুবক। ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বললে যুবতীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় অভিযুক্ত। ভয় দেখিয়ে আগেও তাঁকে কয়েকবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিশেষভাবে সক্ষম ওই যুবতী ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। আকারইঙ্গিতে নির্যাতনের বিষয়টি তাঁর মামিকে জানান। ঘটনাটি জানাজানি হতেই অভিযুক্ত পালিয়ে যায়। এদিকে, অভিযুক্তের পরিবারের অনুরোধে গ্রামের মাতব্বররা সালিশি সভা বসায়। সেখানে প্রথমে অভিযুক্তের পরিবারের তরফে সাত হাজার এবং পরে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ওই পরিবার রাজি না হয়ে পুলিসের দ্বারস্থ হয়। বালুরঘাটের ডিএসপি (সদর) বিক্রম প্রসাদ বলেন, মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।
ঘটনাটি গত রবিবারের। বিশেষভাবে সক্ষম নাতনিকে রেখে একই পাড়ায় নিজের ছেলের বাড়ি গিয়েছিলেন দিদা। এই সুযোগে অভিযুক্ত যুবক বাড়িতে ঢুকে যুবতীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, অভিযুক্ত যুবক তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তের পরিবার পাড়ার মাতব্বরদের নিয়ে সালিশি সভা বসায়। আপোষ করে নেওয়ার জন্য সোমবার সালিশিতে নির্যাতিতার পরিবারকে টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথমে সাত হাজার এবং পরে ৪০ হাজার টাকা দিতে চায় নির্যাতিতার পরিবারকে। কিন্তু যুবতীর পরিবার তা মানতে চায়নি। নির্যাতিতার বাবা-মা ও এক দাদা দিল্লিতে রয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি প্রথমে থানায় জানান। বুধবার পুলিসের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার মামি। যুবতীর মামির কথায়, আমার ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে অভিযুক্ত। ছেলেটির পরিবার সালিশি সভা বসিয়ে আমাদের টাকার টোপ দিয়েছিল। আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। এদিকে, অভিযুক্তের রাজনৈতিক যোগ থাকা নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, শাসকদলের মদতেই সালিশি বসানো হয়েছিল। অভিযুক্ত তৃণমূল করে, তাই গ্রেপ্তার হয়নি। পুরো ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মলয়কুমার মণ্ডল বলেন, গ্রামে সালিশি কে বসিয়েছিল, জানি না। তবে নির্যাতিতার এক আত্মীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। পরিবারটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযুক্ত তৃণমূল করে কি না, বলতে পারব না। অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে।