• জীবিতকে মৃত দেখানো ও পদবি পাল্টে পাট্টা জমির রেকর্ড বদল? তোলপাড় মান্দারমণি, তদন্তের নির্দেশ দিলেন এডিএম
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: জীবিত ব্যক্তির ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে হোটেল ব্যবসায়ী নিজেকে তাঁর ছেলে পরিচয় দিয়ে জমির সত্ত্ব নিজের নামে করে নিয়েছেন। রামনগর-২ ব্লকের কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন দাদনপাত্রবাড় মৌজায় বেনজির ওই ঘটনায় ভূমি দপ্তরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। মন্দারমণিতে হোটেল তৈরির মতো সুবিধাযুক্ত পাট্টা পাওয়া প্রায় ৭১ ডেসিমেল জমি এভাবে বেহাত হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনা জানাজানি হতেই জমির আসল মালিক শ্রীকান্ত মণ্ডল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার তাঁকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর শ্রীকান্তবাবু এনিয়ে রামনগর-২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। অবিলম্বে রেকর্ড সংশোধন করে তাঁর নামে জমির মালিকানা ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ভূমি দপ্তর।

    অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি) বৈভব চৌধুরী বলেন, ওই ডেথ সার্টিফিকেট আসল কি না জানতে গ্রাম পঞ্চায়েতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জাল প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করা হবে। আর জমির রেকর্ড সংশোধন করে আসল মালিকের নামেও করা হবে। এধরনের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেকর্ড আসল মালিকের নামে সংশোধন করার সরকারি নিয়ম আছে। রেকর্ড বদলের সময় ভূমি দপ্তরের কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ভেরিফাই করেন। সেই কর্মীর ভূমিকা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।জানা গিয়েছে, দাদনপাত্রবাড় মৌজায় শ্রীকান্ত মণ্ডলের ৭১ ডেসিমেল পাট্টা জমি রয়েছে। পাট্টা জমি হস্তান্তরযোগ্য নয়। তবুও তিনি প্রায় ৬৫ ডেসিমেল জমি কলকাতার চারজন ব্যক্তিকে ডিড করে ভোগদখল করার জন্য তুলে দেন। সেই জমিই হাতবদল হয়ে এক হোটেল ব্যবসায়ী পান। তিনি সেখানে একটি হোটেল নির্মাণ করেছেন। পাট্টা জমি বিক্রি হয় না। মালিকানাও বদল হয় না। কিন্তু, পাট্টাপ্রাপক মারা গেলে ওয়ারিশ সূত্রে সন্তানদের নামে রেকর্ড হয়। অভিযোগ,এই অবস্থায় ওই ব্যবসায়ী পদবি বদলে শ্রীকান্তবাবুর ওয়ারিশ পরিচয়ে এফিডেটিভ কপি জমা দেন। তাতে শ্রীকান্তবাবুকে মৃত এবং সেই সুবাদে জমির রেকর্ড তাঁর নামে করার আর্জি জানান। সেইমতো ভূমি দপ্তর থেকে তাঁর নামে ৭১ ডেসিমেল জমির রেকর্ড হয়ে যায়। হলফনামায় ওই ব্যবসায়ীর ছবি আছে বলে রামনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বিজয়শঙ্কর পট্টনায়েক জানিয়েছেন।

    মঙ্গলবার ভূমি দপ্তরের কর্মীরা শ্রীকান্তবাবুর বাড়িতে যান। তাঁদের কাছ থেকেই পাট্টা পাওয়া জমির সত্ত্ব বদল হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই ঘটনায় ভূমি দপ্তরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। বিজয়শঙ্করবাবু বলেন, বৃহস্পতিবার শ্রীকান্তবাবু আমার অফিসে এসেছিলেন। পাট্টা পাওয়া জমি হস্তান্তর হয় না। তারপরও ডিড বানিয়ে কলকাতার চারজনকে কেন দিয়েছিলেন। এটাও অন্যায়। তবে, তাঁকে মৃত দেখিয়ে ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট জমা করে যেভাবে জমির সত্ত্ব বদল করা হয়েছে তা চূড়ান্ত বেআইনি। এনিয়ে ভূমি দপ্তর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

    শ্রীকান্তবাবুর ছেলে সুব্রত মণ্ডল বলেন, আমি বাবার একমাত্র সন্তান। অথচ, আমার জীবিত বাবাকে মৃত দেখিয়ে এক হোটেল ব্যবসায়ী পদবি বদল করে ওয়ারিশন সূত্রে ৭১ ডেসিমেল জমি কব্জা করেছে। ওই ঘটনা জেনে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)