প্রতিমার পাশেই রাখা থাকে প্রিয়বাবুর ছবি, দর্শনার্থীরা তাঁকেও প্রণাম করেন
বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: হিন্দিভাষী প্রিয়নাথ সিংয়ের শুরু করা বিষ্ণুপুরের মটুকগঞ্জের দুর্গাপুজো আজ সর্বজনীন। শোনা যায়, ব্রিটিশদের তাড়া খেয়ে বিহারের বাসিন্দা প্রিয়নাথ সিংহ পালিয়ে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে। তিনি মটুকগঞ্জে বসবাস শুরু করেন। একবার মহামারী দেখা দিলে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। প্রাণভয়ে মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করে। মৃতদেহের স্তূপ জমতে থাকে রাস্তায়, মাঠে। সৎকারের অভাবে মৃতদেহগুলি পচেগলে দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করে। অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। তখন প্রিয়নাথ একাই একের পর এক মৃতদেহের সৎকার করেন। পরে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাই পরবর্তীকালে তাঁদের বিপদে আপদে ছুটে আসতেন ছোটখাটো চেহারার প্রিয়বাবু। তাঁর এই পরপোকারী মনোভাবের জন্য তিনি সবার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। ক্রমে হরিজনদের নিয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। গড়ে তোলেন বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠান। পরে যার নাম হয় হিন্দু সৎকার সমিতি। ওই সময় বিষ্ণুপুরে যে ক’টি পারিবারিক দুর্গাপুজো হতো, সেখানে হরিজনদের প্রবেশাধিকার ছিল না। তা দেখে প্রিয়বাবু ১৯৩৩ সালে মটুকগঞ্জে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেখানে সমাজের নিচুস্তরের সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিতে শুরু করেন। সেটাই ছিল বিষ্ণুপুরের প্রথম সর্বজনীন পুজো। পরবর্তীকালে ছোঁয়াছুঁয়ির বিচার সরিয়ে এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষ ওই পুজোয় যোগ দেয়। অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে ভোগ খাওয়া পর্যন্ত সকলে মিলেমিশে করেন। আগে মাটির চালায় প্রতিমা স্থাপন করা হলেও পরবর্তীকালে পাকা মন্দির হয়। সেখানেই বর্তমানে ধুমধাম করে পুজো হয়। দেবীমূর্তির পাশেই রাখা থাকে প্রিয়বাবুর প্রতিকৃতি। সেই প্রতিকৃতিতেও প্রণাম করেন মানুষ।
পুজোর বর্তমান কর্মকর্তারা বলেন, বিষ্ণুপুরে দুর্গাপুজোর মাধ্যমে সর্বধর্মের সমন্বয় সাধন করেছিলেন প্রিয়বাবু। ভিন রাজ্যের মানুষ হয়েও তিনি জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে মানবসেবার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন। এক কথায় বিষ্ণুপুরে বর্ণবিদ্বেষ ঘুচিয়েছিলে তিনি। তাই দেবী দুর্গার পাশেই তাঁর প্রতিকৃতি রাখা হয়।