সংবাদদাতা, তেহট্ট: ১৪ বছরের মেয়েটি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখত কীভাবে তার শ্বশুর, ভাসুরদের হাতে ধীরে ধীরে রূপ পাচ্ছে মাতৃমূর্তি। বাপের বাড়ির সবাই চাষবাস করে খায়। শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখল অন্য দৃশ্য। তাঁরা মৃৎশিল্পী। দেবদেবীর প্রতিমা নির্মাণ করেন। দেখতে দেখতে শ্বশুর, ভাসুরদের হাতে হাতে এটাওটা সাহায্যও করত নাবালিকা বউটি। তারপর হাতও লাগাল, বাঁশের কাঠামোয় খড়া বাঁধা, এক মেটে, দু’ মেটে করার কাজ শুরু করল। সেদিনের সেই বালিকা বধূ আজ প্রৌঢ়া। এখন তিনি নিজেই প্রতিমা তৈরি করেন। কাঠামো তৈরি থেকে চক্ষুদান, সব। কুড়ি বছর ধরে প্রতিমা নির্মাণ করে চলেছেন বেতাইয়ের সাধুবাজার গ্রামের গৃহবধূ ছায়া পাল।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বরাত বেশি এলেও তিনি তা নিতে পারেননি। কারণ তাঁকে একাই কাজ করতে হয়। এই বছর তিনি চোদ্দটি প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমার দাম গড়ে ১৮ হাজার টাকা। শুধু দুর্গা প্রতিমাই নয়, বিশ্বকর্মা ও মনসা প্রতিমাও গড়েছেন তিনি।
ছায়া দেবীর স্বামী শঙ্কর পাল এবং ছেলে গোলক পাল দুজনেই প্রতিমা শিল্পী। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছায়া পাল বলেন, আমি পুরোদমে দুর্গা গণেশ, লক্ষ্মী, কালী সমস্ত প্রতিমা তৈরি করতে পারদর্শী সারা বছরই কোনও না কোনও মূর্তির কাজ করতেই হয়। প্রতিমা গড়েই সংসার চলে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লাভের অঙ্ক তলানিতে ঠেকেছে। পরিবেশ দূষণের কথা ভেবে ভেষজ রঙে মূর্তি গড়ার কাজ করেন। স্বামী, সন্তান অন্যত্র মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা তৈরি করেন। ছেলে গোলক পাল বলেন, বাড়িতে তৈরি মূর্তিগুলো মা নিজে হাতে তৈরি করেন। অবসর সময়ে কখনও কখনও আমরা মাকে নামমাত্র সহযোগিতা করি।
প্রতিবেশী বিলাস বিশ্বাস, বিবেকানন্দ ভৌমিকরা বলেন, প্রতিমা শিল্পী ছায়াদেবী বিয়ের আগে মূর্তি গড়ার কাজ সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না। ভাসুর, শ্বশুরদের হাতের কাজ দেখে তিনি নিজেই এখন একজন সুদক্ষ প্রতিমা শিল্পী। এখন তার হাতে গড়া বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা এলাকার বিভিন্ন মন্দিরের জায়গা করে নিয়েছে।