• নদী ভাঙনের আতঙ্ক নিয়েই পুজোর প্রস্তুতি লালগোলার রাধাকৃষ্ণপুরে
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, লালবাগ: গত কয়েক বছর ধরে বর্ষায় পদ্মার লাগাতার ভাঙনে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে লালগোলার তারানগর গ্রামের। পাশের গ্রাম রাধাকৃষ্ণপুরেও দুয়ারে ফুঁসছে পদ্মা। যেকোনও সময়ে গোটা গ্রামকে গিলে খেতে পারে নদী। ভাঙন আতঙ্কে এক মাসের বেশি সময় ধরে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের ওই দুই গ্রামের কয়েকশো পরিবার। সেই ভাঙন আতঙ্ক বুকে নিয়েই রাধাকৃষ্ণপুরে উমা বন্দনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। শরতের সাদা মেঘের তলে গ্রামের মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। মন্দির কমিটির সম্পাদক শ্যামল ঘোষ বলেন, ভাঙন দোরগোড়ায়। তাই বলে তো পুজো বন্ধ রাখা যায় না। ফলে পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না।

    লালগোলা থানার বিলবোরাকোপরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পদ্মাপাড়ের বেশ কয়েকটি গ্রামের মধ্যে একমাত্র রাধাকৃষ্ণপুরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। ওই এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে ফসলি জমির পাশাপাশি নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে কয়েকটি গ্রাম। নদী ভাঙনের মুখে কোনওপ্রকারে অস্তিত্ব টিকে রয়েছে রাধাকৃষ্ণপুরের। ১৬ বছর আগে গ্রামের বাসিন্দারা রাধাকৃষ্ণপুর সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি গঠন করে পুজো শুরু করে। পরবর্তীতে মন্দিরের পাকা দালান হয়েছে। ওই মন্দিরেই পুজো হয়। ওই পুজোকে কেন্দ্র করে তারানগর, রামনগর, রাধাকৃষ্ণপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ উৎসবে মেতে উঠেন। সেই উৎসবের মেজাজ এবার কিছুটা হলেও ম্লান। কারণ রাধাকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে পদ্মা ফুঁসছে। যে কোনও সময় পদ্মার খামখেয়ালিপনার মুখে পড়তে পারে রাধাকৃষ্ণপুর। 

    গ্রামে বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার প্রতিবছর ২৪ প্রহর নামসংকীর্তণ অনুষ্ঠিত হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় দেড়শো বছর আগের চালু হওয়া গ্রামদেবী বুড়িমার পুজো আজও হয়। বুড়িমা গ্রামকে রক্ষা করবেন বলে বুকে আশা বেঁধেছেন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের দাবি, শত বিপদ, ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেও আজও মানুষ শেষ ভরসা হিসেবে ঠাকুর দেবতার উপর নির্ভর করেন। আমরা নিশ্চিত বুড়িমা, দুর্গা রাধাকৃষ্ণপুরকে নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন। প্রতিবছর দশমীর দিন রাধাকৃষ্ণপুরে মেলা বসে। গত বছর মেলার ময়দান নদী ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। তাতেও বাসিন্দাদের বিশ্বাসে কোনও চিড় ধরেনি।

    পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ প্রণব সিংহ রায় বলেন, এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী এবং জনমজুর। তবুও সকলেই নিজেদের সাধ্যমতো চাঁদা দেন। অবশ্য গত কয়েক বছর থেকে সরকারি অনুদান পাওয়ায় পুজোর জৌলুস বেড়েছে। এবার অনুদানের টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজেট বেড়েছিল কিন্তু শিয়রে নদী ভাঙন আতঙ্ক সব জৌলুসকে ম্লান করে দিচ্ছে। পুজো কমিটির সভাপতি বাদলচন্দ্র সিংহ বলেন, নদী তো নিয়ম করে ভাঙছে, মানুষ গৃহহীন হচ্ছেন। কিন্তু এরই মাঝে স্থানীয় বিধায়ক মাঝে মাঝে গ্রামে হাজির হয়ে আমাদের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। পুজোর আনন্দ যাতে মাটি না হয় সেদিকে নজর দিচ্ছেন, এটাও তো বড় পাওনা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)