মেট্রো গেলেই কাঁপছে পাড়া! আতঙ্ক কাটছে না বউবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের
বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বউবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের ছ’বছর অতিক্রান্ত। তারপর বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে কয়েকদিন আগে বউবাজারের পাতাল পথ দিয়ে চালু হয়েছে মেট্রো চলাচল। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের সম্পূর্ণ রুটে মিলছে পরিষেবা। কিন্তু ছ’বছর আগের সেই আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, নীচ দিয়ে মেট্রো যখন যাচ্ছে, তখন তাঁরা কম্পন টের পাচ্ছেন। ঘরদোরের পুরনো ফাটলগুলি চওড়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের। মূলত সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে যে বাড়িগুলি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং পরে মেরামত করে ফের বসবাস শুরু হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে সেই সব বাড়ির ৭০ জনের বেশি বাসিন্দা স্বাক্ষর সহ চিঠি দিচ্ছেন কাউন্সিলারকে।
২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট বউবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গ খনন করতে গিয়ে বিপর্যয় ঘটে। মাটির তলায় কাজের সময় তীব্র কম্পনে ধস নামে এলাকায়। একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। কোনও কোনও বাড়ি ভেঙেও পড়ে। ঘরছাড়া হন দুর্গা পিতুরি লেন, স্যাকরাপাড়া, মদন দত্ত লেন, গৌর দে লেনের শতাধিক বাসিন্দা। পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ২৪টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। বর্তমানে সেই বাড়িগুলি নতুন করে গড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বাদবাকি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি মেরামত করে বাসিন্দাদের ঢোকানো হয়েছে। মূলত তাঁরাই এখন আতঙ্কের জীবন কাটাচ্ছেন।
৬বি, দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা সুবীরকুমার দত্ত বলছিলেন, ‘নীচ দিয়ে মেট্রো গেলেই কম্পন হচ্ছে। ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে সেই কম্পন। সেই রাতের মতো আবার যদি কোনও ঘটনা ঘটে, প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে ভুগছি।’ বাড়িগুলি মেরামতির মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বাসিন্দাদের। সুবীরবাবু তাঁর বাড়ির বিভিন্ন জায়গা দেখিয়ে দাবি করেন, ঠিকমতো প্লাস্টারই করা হয়নি। তাই ফাটল রয়ে গিয়েছে। দিনে দিনে পুরনো ফাটল বড় হচ্ছে। মেট্রো ঠিকমতো কাজ করেনি বলেই এই হাল বলে অভিযোগ করেন তিনি। ৯, দুর্গা পিতুরি লেনের একটি ঘরে লোহার রড দিয়ে ছাদের সার্পোট দেওয়া রয়েছে। এই অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দা সমর সেন, অমিত সেনরা। অমিতবাবুর কথায়, ‘ভয় তো আছেই। যদি মেট্রো সব ভালোভাবে মেরামতি করেই দিত, তাহলে এই রডগুলো রেখে গিয়েছে কেন? মেট্রো গেলে তো ঘর কাঁপছে। আমরা কাউন্সিলারকে চিঠি দিচ্ছি। মেট্রো কর্তৃপক্ষকেও জানাব।’ বাসিন্দাদের দাবি, আগেও মেট্রোকে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি। তাই এই আতঙ্ক, অনিশ্চয়তার পরিবেশ কবে কাটবে বা আদৌ কাটবে কি না, ঘোর সংশয়ে তাঁরা। স্থানীয় ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিশ্বরূপ দে বলেন, ‘আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা সবটাই সত্যি। কিন্তু ঘরের ফাটল বাড়ছে বা যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন পরিস্থিতি এখনও আসেনি। অন্তত পাঁচ থেকে ছ’মাস না গেলে বোঝা সম্ভব নয়, মেট্রো চলাচলের জেরে কতটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা নজর রাখছি।’ নিজস্ব চিত্র