এসআইটিতে জ্ঞানযজ্ঞ! শেষ হল 'নলেজ নকআউট সিজন-২' আন্তঃবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা...
আজকাল | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের অবসান হল অবশেষে। শুক্রবার শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এসআইটি)-এর সুকনা-শালবাড়ি ক্যাম্পাসের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হল 'নলেজ নকআউট সিজন-২' আন্তঃবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল।
টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ এবং এসআইটি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কুইজ প্রতিযোগিতা গত কয়েক মাস ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য ছিল ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি, সৃজনশীল চিন্তাশক্তির বিকাশ, দলগত মনোভাব গঠন এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
এই অনুষ্ঠানের জয়েন্ট কনভেনর ডঃ অরুপ দাস, পারমিতা চৌধুরী, সুপ্রতীম সরকার ও রত্নাঙ্কুর মজুমদার বলেন,'প্রথম পর্যায়ের লিখিত বাছাই পর্ব উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই অনুষ্ঠিত হয়। কঠিন প্রতিযোগিতা শেষে সেরার সেরা কিছু বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ফাইনালে জায়গা করে নেয়। এই বৃহৎ আয়োজনে উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। খবর অনুযায়ী ২১টি শহরের মোট ৪০ টিরও বেশি বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীরা নাম নথিভুক্ত করে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি স্কুলের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিরও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে এবারের আসরে নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাও প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে।'
অন্যদিকে, এদিন সকাল থেকেই এসআইটি’র আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সেমিনার হলে ছিল এক উৎসবের আবহ। কারণ বিভিন্ন জেলার প্রতিযোগিরা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা ভিড় জমিয়েছিলেন। পুরো হলজুড়ে প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই উত্তেজনা ও প্রত্যাশার স্রোত স্পষ্টভাবে চোখে পড়ছিল। ফাইনালের কুইজ মাস্টার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কুইজ সংস্থা 'কুইজ ক্যাটালিস্ট'-এর প্রতিষ্ঠাতা সূর্য নারায়ণন। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন, চমৎকার উপস্থাপনা ও প্রতিযোগিতার প্রাণবন্ত পরিচালনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথ ক্যালকাটা ল' কলেজের অধ্যাপিকা ডঃ মৌশ্রী বশিষ্ট। তিনি সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিহীন এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম প্যারাসাইকেলিস্ট ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোলো-রাইডার শ্রী রাকেশ বণিক সহ টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাস্কর রায়, কলেজ অফ প্রোফেশনাল স্টাডিজের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী, কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ জয়দীপ দত্ত ও শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কলেজের সমস্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকাগণ; যাদের উপস্থিতি প্রতিযোগিতার গৌরব ও মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেয়।
এদিন, কলেজ অফ প্রফেশনাল স্টাডিজের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী বলেন, 'সেমিফাইনাল পর্ব ছিল যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উত্তেজনাপূর্ণ। প্রাথমিক স্তরে, ৭টি কোয়ালিফায়ার রাউন্ড ও ১টি ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি রাউন্ড শেষে নির্বাচিত হয় ১৬ জন সেমিফাইনালিস্ট। পরবর্তী ধাপে সেখান থেকে নির্ধারিত হয় ৮ জন ফাইনালিস্ট। আর চূড়ান্ত পর্বে সেই ৮ জনের মধ্য থেকেই উঠে আসে ৩ জন বিজয়ীর নাম। এরপর ফাইনাল পর্বে ১ম স্থান অধিকার করে বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ কোচবিহারের দেবাদিত্য সরকার, ২য় স্থান অধিকার করে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল আলিপুরদুয়ারের আহেল অনুরাগ এবং ৩য় স্থান অধিকার করে শিলিগুড়ি নেতাজি হাইস্কুলের দেবর্ষী ঘটক। সেরা তিন বিজয়ীকে যথাক্রমে ₹৪০,০০০, ₹৩০,০০০ এবং ₹২০,০০০ টাকার নগদ পুরস্কার, আকর্ষণীয় ট্রফি ও শংসাপত্র প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, দর্শকদের জন্যও ছিল চমক। যেমন সঠিক উত্তর দেওয়া শিক্ষার্থী ও অতিথিদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।'
অপরদিকে, অনুষ্ঠানের তাৎপর্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডঃ জয়দীপ দত্ত বলেন, 'এই প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি কুইজ প্রতিযোগিতা নয়, বরং উত্তরবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানচর্চা, মানসিক দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির এক বিরল মঞ্চ। এই প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও দ্রুত চিন্তাশক্তি বৃদ্ধির জন্য এক অসাধারণ সুযোগ। আগামীতে আমরা আরও বৃহত্তর পরিসরে এই ধরনের আয়োজন করতে চাই, যাতে উত্তরবঙ্গের আরও বেশি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারে।'