সকাল ৬টা থেকে বনগাঁ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উৎসাহী মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছিল। সকলেই যে নিত্যযাত্রী এমনটা নয়। উপস্থিত জনতার অনেকেই ট্রেনে চেপে কোনও গন্তব্যে যাবেন বলেও আসেননি। কেউ এসেছিলেন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। কেউ আবার পরিবারের সকলকে নিয়ে। উদ্দেশ্য একটাই, স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হতে চান সকলে।
সকাল ৭টা ৪২ মিনিটে এল সেই মুহূর্ত। রানাঘাট থেকে বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছল বনগাঁ-রানাঘাট এসি লোকাল ট্রেন। দূর থেকে ট্রেনটিকে আসতে দেখে বা মাইকে ট্রেন আসার ঘোষণা শুনেই মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। শ’য়ে শ’য়ে মোবাইল তখন ছবি তোলার অপেক্ষায়। ট্রেনের সামনে বা পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেল অনেককে। অনেকে ফেসবুক লাইভ করছিলেন। বনগাঁ থেকে যাঁরা ট্রেনে উঠেছেন, তাঁরা সকলেই বসার জায়গা পান। পরে ভিড় বাড়ে। তবে এ দিন সরকারি ছুটি থাকায় অন্য দিনের মতো প্রবল ভিড় ছিল না।
শুক্রবার সকাল থেকে চালু হয়ে গেল বনগাঁ-শিয়ালদহ এবং বনগাঁ-রানাঘাট এসি লোকাল। রানাঘাট থেকে ৭টা ১১ মিনিটে ছেড়ে এসে ৭টা ৪২ মিনিটে বনগাঁ স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকে প্রথম এসি লেকাল। ১০ মিনিট দাঁড়ানোর পরে শিয়ালদহের দিকে রওনা দেয়। সকাল ৬টা ৫৪ মিনিটে ৬০ টাকা দিয়ে বুকিং কাউন্টার থেকে প্রথম টিকিটটি কেটেছেন গোবরডাঙার বাসিন্দা রত্না চৌধুরী। বনগাঁয় আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলেন। ফেরার সময়ে এসি ট্রেন আসছে শুনে টিকিট কেটেছেন। বললেন, ‘‘ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে ভাল লাগছে।’’ প্রথম এসি ট্রেনে চেপে সপরিবার দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে গেলেন বনগাঁর সঞ্জীব রায়। অভিজিৎ বিশ্বাস, অজয় দাসেরা ছ’জন বন্ধু মিলে প্রথম এসি ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এসেছিলেন। জানালেন, ৪০ টাকা দিয়ে ঠাকুরনগর পর্যন্ত টিকিট কেটেছেন (সর্বোচ্চ ভাড়া ১২০ টাকা, বনগাঁ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত)।
প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের ভিতরে চোখে পড়ার মতো পুলিশি আয়োজন ছিল। ট্রেনে যাত্রীর চেয়ে ভ্লগার ও ছবিশিকারির সংখ্যা ছিল বেশি। ট্রেন ছাড়ার এক মিনিট আগে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেনে উঠতে না পেরে চালকের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা গিয়েছে অনেককে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ সকালে রানাঘাট থেকে এসি লোকাল ছাড়ার সময় সকাল ৭টা ১১ মিনিট। বনগাঁ থেকে সকাল ৭টা ৫২ মিনিটে বনগাঁ-শিয়ালদহ লোকাল ছাড়বে। শিয়ালদহে পৌঁছবে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। শিয়ালদহ থেকে এসি লোকাল ছাড়ার সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিট। বনগাঁ স্টেশনে ওই ট্রেন পৌঁছবে রাত ৮টা ০৪ মিনিটে। তারপরে গন্তব্য রানাঘাটে পৌঁছবে রাত ৮টা ৪১ মিনিটে।
বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় শুরু হল চলেছে বাতানুকূল ট্রেনের সফর। তবে তা বেশ কিছু স্টেশনে না দাঁড়ানোয় কয়েক জায়গায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ নিয়ে সই সংগ্রহ করছেন বামপন্থী কর্মী-সমর্থকেরা।