• দিঘায় মন্দির, জগন্নাথের কদর ছৌয়ের মুখোশেও
    আনন্দবাজার | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ছৌ-মুখোশে নতুন করে চাহিদা বেড়েছে জগন্নাথদেবের। পুরীর আদলে দিঘায় প্রতিষ্ঠিত নতুন জগন্নাথ মন্দির ঘিরে উৎসাহে ভাটা পড়েনি। সে সূত্রেই ছৌ-মুখোশের আঁতুড়ঘর পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি চড়িদার শিল্পীরাও এখন জগন্নাথের মুখোশ তৈরিতে মন দিয়েছেন। জগন্নাথের ছোট মূর্তিও বানাচ্ছেন তাঁরা। তবে ছৌ-নাচের আসরে এখনই জগন্নাথদেবের চরিত্র ঠাঁই পাবে, এতটা আশাবাদী নন নৃত্যশিল্পীরা।

    পুরুলিয়ার ঐতিহ্যের ছৌ-নাচের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ছৌয়ের মুখোশ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবী, বিশেষ করে দুর্গা, তাঁর চার ছেলেমেয়ে আর মহিষাসুরের মুখোশ বানাতেন শিল্পীরা। আদিবাসী পুরুষ-মহিলা, জীবজন্তুর মুখের মুখোশও তৈরি হত। সময়ের চাহিদা মেনে কথাকলি শিল্পী, মিশরের ফারাওদের মুখের আদল থেকে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রের মুখোশ বানাচ্ছেন চড়িদার শিল্পীরা। কৃষ্ণের মুখও বানিয়েছেন। এ বারতালিকায় জগন্নাথ।

    দিঘায় জগন্নাথ মন্দির হওয়ার পরে এই চাহিদা বেড়েছে। পর্যটকদের কাছে জগন্নাথের মুখোশ ও মূর্তি বিকোচ্ছে ২৫০-১৫০০ টাকায়। কলকাতার দোকানেও পাঠানো হচ্ছে। মুখোশশিল্পী টুম্পা সূত্রধরের কথায়, ‘‘আগে জগন্নাথদেবের মুখোশ একদম হত না, তা নয়। তবে দিঘার মন্দিরের পরে, অনেক ক্রেতা ‘জগন্নাথের মুখোশ চাই’ বলে আবদার করছেন।’’

    চড়িদায় রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে একশোর বেশি মুখোশের দোকান। মুখোশে বৈচিত্র্য আসায় বিক্রিবাটাও বেড়েছে। পুরুষ, মহিলা, এমনকি, কমবয়সিরাও এখন এই কাজে যুক্ত। শিল্পী ত্রিগুণি সূত্রধর জানালেন, অনেকে মূর্তিও চাইছেন। আর এক শিল্পী উদ্ধব সূত্রধরের মতে, ‘‘হঠাৎ করে জগন্নাথের মুখোশের বিক্রি যে ভাবে বেড়েছে, তাতে চাহিদা সামাল দিতে রোজ ওই মুখোশই আগে তৈরি করতে হচ্ছে।’’ ‘বাঘমুণ্ডি হোটেল অ্যান্ড লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুজিতচন্দ্র কুমারের দাবি, ‘‘চড়িদার জগন্নাথের মুখোশের খ্যাতি ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। হোটেলে আসা পর্যটকদের অনেকে চড়িদায় জগন্নাথের মুখোশ মিলবে কি না, জানতে চাইছেন।’’

    রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত ছৌ-নৃত্যশিল্পী প্রয়াত গম্ভীর সিং মুড়ার গ্রাম চড়িদায় জগন্নাথদেবের মুখোশের চাহিদার কথা জানেন আর এক প্রবীণ ছৌশিল্পী ভুবন কুমার। তবে কোটশিলার বামনিয়া গ্রামের বাসিন্দা, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভুবনের বক্তব্য, ‘‘কিছু বিশেষ কাহিনী অবলম্বনে ছৌনাচের পালা রচনা করা হয়। মুখোশের বিক্রি বাড়ার অর্থ এই নয় যে, এই মুহূর্তে জগন্নাথদেবকে ছৌ-নাচের আসরে এনে পালা রচনা করা হবে।’’

    তবে ছৌ-এর মুখোশে জগন্নাথের কদরের কথা জেনে দিঘার ‘জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’-এর ট্রাস্ট কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা ইসকনের কলকাতা শাখার সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিঘায় মন্দির উদ্বোধনের পরে, জগন্নাথদেবকে নিয়ে সকলেরই আগ্রহ বাড়ছে। এতে ছৌ-মুখোশশিল্পীরা কাজেও বৈচিত্র আনতে পারবেন, উপার্জনও বাড়বে।’’ এসডিও (ঝালদা) রাখী বিশ্বাস বলেন, ‘‘চড়িদার মুখোশের বিপণন নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। জেলা প্রশাসনের নজরেও আনা হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)