• চোরাশিকার রুখে দিতে অক্লান্ত সত্তরোর্ধ্ব অক্ষয়
    আনন্দবাজার | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • পরিযায়ী পাখিদের শিকার রুখতে চোরাশিকারিদের পিছু ধাওয়া করছেন সত্তরোর্ধ্ব। বেগতিক বুঝে এক মহিলা-সহ চার চোরাশিকারি ব্যাগভর্তি ৫০টি পরিযায়ী পাখির ছানার মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি মাস দেড়েক আগের। তবে এতগুলি পাখির ছানার মৃত্যুর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি অক্ষয়কুমার পাল। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। থাকেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের মারনাই গ্রামে।

    মারনাই গ্রামে বহু পুকুর ছাড়াও লাগোয়া এলাকায় সুঁই ও মহানন্দা নদী রয়েছে। খাবারের টানে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন এলাকার বহু জলাশয়, নদী, গাছে পরিযায়ী পাখিরা আসে। অক্টোবর মাস নাগাদ পরিযায়ী পাখিরা চলে যায়। জলাশয় ও জঙ্গলে ঘেরা ওই গ্রামে এখনও বহু শেয়াল, বনবিড়াল ও বেজির বাস। ফলে, ওই গ্রামে চোরাশিকারিদের হানাও লেগে থাকে। ২০০৯-১০ নাগাদ মারনাই গ্রামে পরিযায়ী পাখিদের শিকার করা শুরু হয় বলে অভিযোগ। সেই শিকার রুখতেই সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেন অক্ষয়।

    ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে স্থানীয় মালঞ্চি প্রাথমিক স্কুল থেকে অবসরের পরে, সেই কাজের গতি আরও বাড়ান এই শিক্ষক। গত এক দশক অক্ষয় ওই গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার, ফ্লেক্স দিয়ে ও শিবির করে এলাকার পরিযায়ী পাখি, শেয়াল, বনবিড়াল ও বেজির শিকার রোখার চেষ্টা করছেন।সেগুলি বাঁচানোর বিষয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করছেন। সে সব বাঁচাতে নজরদারি করতে এলাকার পড়ুয়া, তরুণ-তরুণী, বধূদের নিয়ে দল গড়েছেন। কিছু দিন আগে তাঁর নেতৃত্বে তাঁর দলের সদস্যেরা মারনাই এলাকায় পরিযায়ী পাখি গণনার কাজও করেন। অক্ষয়ের দলের সদস্যা মৌমিতা দাস, মৌসুমী নন্দীদের দাবি, “স্যর বহু বার চোরাশিকারিদের সামনে পড়েছেন। ওঁকে মারধরের চেষ্টা এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্যর দমে যাওয়ার পাত্র নন।”

    অক্ষয় বলেন, “পরিযায়ী পাখি ও বন্যপ্রাণীরা বেঁচে থাকলে প্রকৃতি সুন্দর থাকবে। পরিবেশের ভারসাম্য ও বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার ভাবনা থেকেই কাজ শুরু করি। যতদিন বাঁচব, এলাকায় পরিযায়ী পাখি, শেয়াল, বনবিড়াল ও বেজিদের বাঁচাতে লড়াই চালাব। চোরাশিকারিদের হুমকির কাছে মাথা নত করব না।” তাঁর ক্ষোভ, মাস দেড়েক আগে ওই গ্রামে পরিযায়ী পাখির ছানাদের শিকারের ঘটনায় অভিযুক্তদের এখনও ধরতে পারেনি বন দফতর। এলাকায় বন দফতরের নজর থাকলে, চোরাশিকার হত না।

    রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) ভূপেন বিশ্বকর্মার অবশ্য দাবি, মারনাই গ্রামে পরিযায়ী পাখি-সহ বন্যপ্রাণীদের চোরাশিকার রুখতে বন দফতরের নজরদারি রয়েছে। তিনি বলেন, “অক্ষয়বাবু পরিযায়ী পাখি-সহ বন্যপ্রাণীদের চোরাশিকার রুখতে খুব ভাল কাজ করছেন। মারনাইতে গিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলে এসেছি। দরকারে, আবার গিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে শুনব।” মারনাই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান আঞ্জুরা বিবি বলেন, “পরিযায়ী পাখি এবং বন্যপ্রাণী শিকার রোখার কাজে অক্ষয়বাবুদের কোনও সমস্যা হলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে জানাতে অনুরোধ করছি।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)