ভোটের পরিচয়পত্র অনুযায়ী তিনি একশো বছর পেরিয়েছেন দু’বছর আগে। এখনও হাঁটাচলা করেন দিব্যি। তবে দাঁতগুলো পড়ে গিয়েছে। খাওয়াদাওয়া করতে বেশ বেগ পেতে হয়। সাধের মুড়ি-মোয়া চিবোনো এখন স্বপ্ন। একশো পার করা সেই বৃদ্ধের মাড়িতে হঠাৎ উঁকি দিল ‘নতুন’ দাঁত। গ্রামে রটে গেল সেই খবর। আর ‘নতুন’ দাঁত গজালে, মুখেভাত দিতেই হয়। নাতি-নাতনিদের আটকাবে কে?
শুক্রবার সেই উপলক্ষে কোচবিহারের হলদিবাড়ির বড়কুড়ারপার গ্রামে বসল ভোজের আসর। ১০২ বছরের নিপিন্দ্র বর্মণের বাড়িতে অতিথিদের মধ্যে বিডিও থেকে শুরু করে সদলবলে হাজির হলেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আধিকারিকেরাও।
চৌত্রিশ জন নাতি-নাতনি ত্রুটি রাখেননি আয়োজনে। প্যান্ডেল, বাজনা, পুরোহিত, মন্ত্র— বাদ ছিল না কিছুই। দাদুকে পায়েস খাওয়ালেন সবাই। একটি মাত্র দাঁত সম্বল করে এক গাল হাসলেন দাদু। টপাটপ ছবি উঠল। পাত পেড়ে ভাত, ডাল, রুইমাছের কালিয়া, খাসির ঝোল, চাটনি, মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বাড়ি ফিরলেন অতিথিরা।
নিপিন্দ্রর জন্ম হয়েছিল অবিভক্ত ভারতের রংপুর জেলার মুক্তিরহাটে (ভোগডাবুড়ি)। চাষবাস করে মানুষ করেছেন তিন ছেলে, চার মেয়েকে। হাসিমুখে তিনি বলেন, “ভাবতেই পারিনি, এমন আয়োজন হবে! কেমন লাগছে, বলে বোঝাতে পারব না!”
বিডিও রেঞ্জি লামো শেরপা এ দিন উপহার হিসেবে এনেছিলেন ধুতি-পাঞ্জাবি ও টক দই। তাঁর রসিকতা, “১০২ বছরের শিশুর অন্নপ্রাশন। এই সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?” বৃদ্ধের নাতনি সঙ্গীতা রায়ের কথায়, “এ সুযোগ খুব কম মানুষেরই হয়। আমরা ভাগ্যবান।”
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা তথা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ অরিন্দম সাহা অবশ্য বলেছেন, “সাধারণ ভাবে কখনও এই বয়সে নতুন করে দাঁত উঠতে পারে না। আগে থেকেই হয়তো আক্কেল দাঁত ছিল। তা এখন মাড়ি ফুঁড়ে বেরিয়েছে।”