রাজ্যে শিক্ষার বেহাল দশার কথাই উঠে এল ‘শিক্ষক দিবস’ পালনে বিরোধীদের নানা মঞ্চ থেকে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার এক্স হ্যান্ড্লে বলেছেন, ‘সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। নব-প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মূল কারিগর তাঁরাই।’ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘আমরা সেই দিকনির্দেশক আলোকশিখাদের প্রণাম জানাই, যাঁরা শিক্ষার বীজ বুনে দেন, আত্মবিশ্বাস জোগান এবং উজ্জ্বল আগামীর ভিত্তি তৈরি করেন।’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য তৃণমূল সরকারকেই শিক্ষার ‘অবনমনে’র জন্য দায়ী করেছেন। কাঁথি, নন্দীগ্রাম, বেলদা, মেদিনীপুর-সহ নানা জায়গায় শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বেলদায় তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের ৮২০০ স্কুল বন্ধ। শিক্ষক শব্দটা শ্রদ্ধার। কিন্তু আজ কে আসল, কে নকল শিক্ষক বাছতে হচ্ছে! শাসক দলের আয়ের উৎস কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাড়ে তিন মাস সরকারি কলেজে ভর্তি বন্ধ রাখা হল। মুখ্যমন্ত্রী ৫-এর বদলে ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করলেন। তোষণের জন্য জয়েন্টের ফল আটকে রাখলেন। বাংলায় শিক্ষা-ব্যবস্থার সর্বনাশ করছে সরকার।” বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে যোগ্যরাই চাকরি পাবেন বলে ফের দাবি করেছেন শুভেন্দু। কলকাতায় দলের শিক্ষক সেলের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও সরকারি স্কুলের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের রানিনগরে একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক উজ্জ্বল সিংহ রায়ের অপমৃত্যুর ঘটনায়, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পরিচালন সমিতির সদস্য এক তৃণমূল নেতা-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। শিক্ষক দিবসে মৃত শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, “স্কুল-ব্যবস্থাটা দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে। মুখ্যমন্ত্রী ‘আমরা চোর’ বলে ঘুরছেন। আর এই শিক্ষককে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন।”
শিক্ষাক্ষেত্রের এমন হাল বদলের জন্য গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। দলের দফতর বিধান ভবনে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি ইমতিয়াজ, চিকিৎসক শঙ্করকুমার নাথ। অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ অন্যেরাও। তাঁদের বক্তব্য, “বিভিন্ন আমলেই নানা আকারে দুর্নীতি ছিল। কিন্তু ঘুষ দিয়ে শিক্ষক হওয়া যাবে, এটা কল্পনাতীত! শিক্ষায় দুর্নীতি ক্যানসারের মতো। গোটা প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যায়। রাজনীতির রং না দেখে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা বলেছেন, “মমতার সময়েই শিক্ষা ও তার সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। রাজনৈতিক হতাশার জন্য সমালোচকদের তা চোখে পড়ে না। শিক্ষক দিবসে সেই পরিবেশই তাঁদের শিক্ষক হয়ে উঠুক।”