• গার্ড দেওয়ার লোক কম, পাশের স্কুল থেকে তলব
    আনন্দবাজার | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বহু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা কম। কোথাও আগে থেকে শূন্যপদ রয়েছে। কোথাও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ চাকরি হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষায় নজরদারি করার (গার্ড) লোকাভাব দেখা দিয়েছে বহু জেলায়। ওই পরীক্ষার আগে সেই জন্য শিক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায় ধারেকাছের স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা চাওয়া হচ্ছে। এই আবহে চলছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও।

    এ বিষয়ে এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার শুক্রবার বলেছেন, “৬৩৬টা পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে এ রকম কোথাও কোথাও হতে পারে। এসএসসি-র আঞ্চলিক অফিস বলতে পারবে। কারণ, জেলার পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক অফিস যোগাযোগ করে।”

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দির হাই স্কুলে পরীক্ষার্থী ৯৫৮ জন। প্রধান শিক্ষক শ্যামসুন্দর জানার কথায়, “স্কুলের ২৪ জন শিক্ষক কী করে এত পরীক্ষার্থীকে সামলাবেন? বিভিন্ন স্কুল থেকে ২৬ জন শিক্ষক গার্ড দিতে আসবেন।” মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বারে এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা প্রায় হাজার জনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিশ্বজিৎ দাস জানান, গার্ড দেওয়ার লোকাভাব মেটাতে আশপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আট জন শিক্ষককে নেওয়া হয়েছে।

    পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহরের মডেল ইনস্টিটিউশনে ৬০০ জন এসএসসি-র নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন। সেখানে ২৫ জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। আদালতের নির্দেশে এক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। জানা গিয়েছে, সেখানে পরীক্ষার জন্য অন্য স্কুল থেকে তিন জন শিক্ষক চাওয়া হয়েছে। নদিয়ার রানাঘাটের ভারতী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় দে বলেন, “স্কুলে ৫০০ জন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দেবেন। কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় রামনগর মিলনবাগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দুই শিক্ষক গার্ড হিসেবে আসবেন।”

    সূত্রের খবর, হুগলির আরামবাগ মহকুমায় আরামবাগ গার্লস হাই স্কুল ছাড়া, সব স্কুলে নজরদারির জন্য অন্য জায়গা থেকে ১০ থেকে ২৪ জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকা নেওয়া হচ্ছে। বীরভূমে সাত-আটটি কেন্দ্রের জন্য অন্য স্কুল, কলেজ থেকে প্রায় ৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিতে হবে। মুর্শিদাবাদে তিনটি স্কুল গার্ড দেওয়ার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা কম পড়ার কথা জানিয়েছে।

    শিলিগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে তিনটি করে স্কুল তাদের শিক্ষক, কর্মী কম রয়েছে বলে জানানোয় জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর অন্য স্কুল থেকে বাড়তি শিক্ষক, কর্মীর ব্যবস্থা করেছে। জলপাইগুড়িতেও পরীক্ষার নজরদারির জন্য লোক চেয়ে আবেদন করেছেন অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ। জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, “পাশাপাশি স্কুল থেকে অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা চাইতে বলা হয়েছে।” শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এ জন্য মাথাপিছু পাঁচশো টাকা করে দেওয়ার কথা।

    এই আবহে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন যে, “কিছু কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে তৃণমূলের নেতা প্রধান শিক্ষকেরা ৫০,০০০ টাকা দিলে বই হাতে নিয়ে পরীক্ষায় নকল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। মালদহ থেকে অডিয়ো এসেছে। বলা হচ্ছে, দু’লক্ষ টাকা দিলে পাশ করিয়ে দেবে।” অবশ্য রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন এবং সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পাল্টা বলেছেন, “মালদহে দুর্নীতিতে পথ দেখিয়েছেন শুভেন্দুই। ওঁর কাছে কোনও অডিয়ো থাকলে সমাজমাধ্যমে দিন। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)