রহড়ায় অস্ত্র উদ্ধারে শহরের বিপণির যোগ, গ্রেফতার তিন
আনন্দবাজার | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অস্ত্র পাচার করার অভিযোগে এ বার বি বা দী বাগের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো একটি অস্ত্র বিপণির তিন মালিককে গ্রেফতার করলেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ওই দোকানে তল্লাশি চালিয়ে রাতে তিন জনকে ধরা হয়। ধৃতদের নাম সুবীর দাঁ, আভির দাঁ এবং সুব্রত দাঁ। তারা সম্পর্কে তিন ভাই। একই সঙ্গে, তল্লাশি চালিয়ে দোনলা ও একনলা বন্দুক মিলিয়ে মোট ৪১টি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, কোথা থেকে ওই আগ্নেয়াস্ত্র বিপণিতে এসেছে, তা জানাতে পারেনি অভিযুক্তেরা। গোয়েন্দারা ওই দোকানটি সিল করে দিয়েছেন।
এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, গত মাসে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অন্তর্গত রহড়া থানার পুলিশ একটি আবাসনে হানা দিয়ে এক হাজার রাউন্ড গুলি এবং ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল। গ্রেফতার করা হয় মধুসূদন মুখোপাধ্যায় নামে এক অস্ত্র কারবারিকে। সেই ঘটনার তদন্তভার নিয়ে এসটিএফ জানতে পারে, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং কার্তুজের বেশির ভাগই বি বা দী বাগের ওই বিপণি থেকে মধুসূদনের কাছে গিয়েছিল। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে সে সংশ্লিষ্ট অস্ত্র বিপণির দুই কর্মীর থেকে ওই আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছিল। পরে সেগুলি বিক্রি করেছিল দুষ্কৃতীদের কাছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থেকে বেআইনি অস্ত্র-সহ কয়েক জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তাদের তদন্তে উঠে এসেছিল বি বা দী বাগের ওই বিপণির নাম। গ্রেফতার করা হয়েছিল দোকানের দুই কর্মীকে। সেই সময়ে গোয়েন্দারা ওই অস্ত্র বিপণিতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর হিসাব-বহির্ভূত অস্ত্রের সন্ধান পেয়েছিলেন। দোকান-মালিকদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ওই সব অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনার ছ’মাস পরে গোয়েন্দারা ফের সংশ্লিষ্ট বিপণিতে তল্লাশি চালালেও মালিকেরা কোনও নথি দেখাতে পারেনি। এর পরেই সুবীর, আভির ও সুব্রতকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দারা জানান, জীবনতলা থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় মোট সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল এই তিন ভাইও। তারা আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছিল।
গোয়েন্দাদের অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরা বি বা দী বাগের ওই বিপণিতে অস্ত্র জমা রাখতেন। কিন্তু সেগুলি সময় মতো তাঁরা না নেওয়ায় ওই সব অস্ত্র দোকানেই পড়ে থাকত। সেই সুযোগে কর্মীরা ওই অস্ত্র মোটা টাকার বিনিময়ে তুলে দিত কারবারিদের হাতে। বৃহস্পতিবারের তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া দোনলা ও একনলা বন্দুকগুলি কার নামে দেওয়া হয়েছিল, তা জানতে পারেননি এসটিএফের গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীরা জানান, অস্ত্রের পাশাপাশি কার্তুজও বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হয়েছে ওই দোকানের তরফে। নিয়ম অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বছরে ৫০টি কার্তুজ কিনতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ অস্ত্রের মালিক তা কিনতেন না। তদন্তকারীদের দাবি, এরই সুযোগ নিয়ে তাঁদের নামে কার্তুজ বিক্রি দেখিয়ে সেগুলি চোরাপথে অস্ত্র পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করা হত। আরও অভিযোগ, পরীক্ষার সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে বলে দেখিয়েও কার্তুজ সরিয়ে রাখত অভিযুক্তেরা, যা পরে বিক্রি করা হত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের।
সূত্রের খবর, কার্তুজ ৩০০-৪০০ টাকায় এবং বন্দুক ৩০-৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করত বি বা দী বাগের ওই বিপণির কর্মীরা। এসটিএফ জানিয়েছে, জীবনতলার মামলায় গ্রেফতার হওয়া ওই দোকানের দুই কর্মীকে ফের হেফাজতে নিয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ধৃত তিন ভাইকে শুক্রবার সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।