তেহট্টের বালক ‘খুনে’র নেপথ্যে পাচারচক্র! গণরোষে নিহত উৎপল কি ‘ছেলেধরা’?
প্রতিদিন | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: বালকের দেহ উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে শিশুপাচার চক্রের যোগ? তেহট্টের নিশ্চিন্তপুরে নিহত বালকের পিসেমশাইয়ের দাবি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই উঠছে সে প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, নিহত অভিযুক্ত উৎপল বিশ্বাস নাকি শিশুপাচার করতে গিয়ে আগে ধরা পড়েছে। তবে কি এবারও পাচারেরই ছক ছিল? কোনও কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় খুন? প্রমাণ লোপাটে ত্রিপলে দেহ মুড়ে ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে? পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
নিহত অভিযুক্ত উৎপল বিশ্বাস পেশায় টোটোচালক। বাঁশবাগানের মাঝে টালির চালের ঘরে স্ত্রী সোমাকে নিয়ে বাস করতেন। উৎপল-সোমার বাড়িতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এলাকার কারও সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখতেন না। স্থানীয়দের দাবি, উৎপল শিশু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। বেশ কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন স্কুলপড়ুয়াকে পাচারের চেষ্টা করেন উৎপল। পলাশি স্টেশনে নিয়ে যায় খুদেদের। বেগতিক বুঝে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে। তা দেখে এক ব্যক্তির সন্দেহ হয়। তাঁর তৎপরতায় ওই শিশুগুলিকে উদ্ধার করা হয়। সেই সময় অবশ্য থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তাই পুলিশ উৎপলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
তৃতীয় শ্রেণির স্কুলপড়ুয়ার পিসেমশাইয়ের দাবি, স্বর্ণাভকেও সম্ভবত অপহরণ করেছিল। তাকে হয়তো পাচারের উদ্দেশ্যও ছিল। তবে সুযোগ না পাওয়ায় খুন করে। এরপর প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় তার দেহ ত্রিপল মুড়ে বাড়ির পাশে বাঁশবাগানের কাছে একটি পুকুরে দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। অতীতের পাচারের চেষ্টার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সন্দেহের তির উৎপল এবং তাঁর স্ত্রী সোমার দিকে। এরপর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই দম্পতির ঘরে চড়াও হয় এলাকাবাসী। অভিযোগ, উৎপল ও সোমার বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়। বাড়ির পাশে থাকা বিশ্বাস দম্পতির চটের গুদামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বাস দম্পতিকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করা হয়। চলে বেধড়ক মারধর। অচৈতন্য হয়ে পড়েন তাঁরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে জানায়। এই ঘটনায় একের পর এক প্রশ্নের ভিড়। শিশুপাচারের মতো গুরুতর অপরাধ করা সত্ত্বেও কেন উৎপলের বিরুদ্ধে সেই সময় অভিযোগ দায়ের হল না? তবে কি উৎপলের সঙ্গে কোনও ‘বড় মাথা’র যোগ রয়েছে? এই সমস্ত প্রশ্নের জট খোলার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।