আজকে ওয়েবডেস্ক: নতুন প্রকাশিত সাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (SRS) স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিপোর্ট ২০২৩ জানাচ্ছে, দেশের মোট উর্বরতা হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (TFR) নেমে এসেছে ১.৯-এ। ২০২২ সালে এই হার ছিল ২.০। এর মানে গড়ে একজন নারী তাঁর প্রজননক্ষম জীবনে ১.৯ সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এই পতনের ফলে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা এক নতুন মোড়ে পৌঁছেছে।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ ভারতে। দীর্ঘদিন ধরে যেখানে জন্মহার বেশি ছিল, সেখানে প্রথমবার উর্বরতা হার কমে এসেছে ২.১-এ, যা প্রতিস্থাপন স্তর বা রিপ্লেসমেন্ট লেভেল নামে পরিচিত। প্রতিস্থাপন স্তর মানে হলো, একটি প্রজন্ম আরেকটি প্রজন্মকে পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপিত করছে। শহুরে ভারতে এই হার আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১.৫-এ। অর্থাৎ একজন শহুরে নারী গড়ে একজন গ্রামীণ নারীর তুলনায় প্রায় এক সন্তান কম জন্ম দিচ্ছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের গ্রস রিপ্রোডাকশন রেট (GRR) ২০২৩ সালে ০.৯। এর মানে, গড়ে প্রতিটি নারী একজন কন্যা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যিনি প্রজননক্ষম বয়সে পৌঁছে নিজেও সন্তান জন্ম দেবেন। গ্রামীণ ভারতে GRR ১.০ হলেও শহরে তা মাত্র ০.৭। রাজ্যভেদে বড় পার্থক্য দেখা যাচ্ছে—দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে GRR সবচেয়ে কম ০.৬, আর বিহারে সবচেয়ে বেশি ১.৩।
উর্বরতার হার রাজ্যভেদে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা দেখাচ্ছে। বিহারেই সর্বোচ্চ TFR, ২.৮। এরপর উত্তরপ্রদেশে ২.৬, মধ্যপ্রদেশে ২.৪ এবং রাজস্থানে ২.৩। অপরদিকে, দিল্লি দেশের সর্বনিম্ন স্থানে ১.২। তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গের হার ১.৩। মহারাষ্ট্রে TFR ১.৪, আর অন্ধ্রপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, কর্নাটক, কেরালা, পাঞ্জাব ও তেলেঙ্গানায় ১.৫। এসব পরিসংখ্যান স্পষ্ট করছে, ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে উর্বরতার হার দ্রুত নেমে গেছে, কিন্তু উত্তর ভারতে এখনও তা তুলনামূলকভাবে বেশি।
রিপোর্টে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে—শিশুমৃত্যুর হার (Infant Mortality Rate - IMR)। দেশে ২০২৩ সালে IMR কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে ২৫-এ। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৩২, অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ৭ পয়েন্ট কমেছে। প্রতিবছর গড়ে ১.৪ পয়েন্ট হারে পতন ঘটছে। গ্রামীণ ভারতে ২০১৮ সালে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৩৬, যা কমে এখন ২৮-এ দাঁড়িয়েছে। শহুরে ভারতে এই হার ২৩ থেকে নেমে এসেছে ১৮-এ। তবে এখনও জাতীয় স্তরে প্রতি ৪০টি শিশুর মধ্যে একটি শিশু জন্মের এক বছরের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। গ্রামীণ ভারতে প্রতি ৩৬ শিশুর মধ্যে একটি মারা যায়, আর শহুরে ভারতে প্রতি ৫৬টির মধ্যে একটি। রাজ্যভেদে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে শিশুমৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ৩৭, আর সর্বনিম্ন মণিপুরে ৩ ও কেরালায় ৫।
সার্বিকভাবে এই রিপোর্ট দেখাচ্ছে, ভারতীয় সমাজে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা ও নগরায়ণের প্রসারের ফলে উর্বরতার হার দ্রুত নেমে আসছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, যদি এই হার ক্রমশ প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে নেমে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে দেশকে বৃদ্ধ জনসংখ্যার চাপ ও কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংকট মোকাবিলা করতে হতে পারে।