• হরিয়ানার হিসারে বেসরকারি সংস্থায় ভয়ঙ্কর ঘটনা!  আধিকারিকের বিরুদ্ধে দফায় দফায় মহিলা কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ
    আজকাল | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার হিসারে এক বিবাহিত নন মহিলা কর্মীকে প্রায় তিন বছর ধরে সংস্থার অফিসে দফায় দফায় ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক বেসরকারি সংস্থার আধিকারিকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে গত জুন মাসের শেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ১৯০০ পৃষ্ঠার বিশদ চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সমগ্র অঞ্চলে তীব্র চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

    অভিযোগ ও নির্যাতনের বিবরণ থেকে জানা যাচ্ছে, পুলিশ ও ভুক্তভোগীর বয়ান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভুক্তভোগীর বাবার মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে পরিচয় হয়। অভিযুক্ত তখন একটি প্রভাবশালী সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের গোড়ায় আইইএলটিএস কোচিং-এর নামে তরুণীকে চণ্ডীগড়ে ডাকা হয়। সেখানে এক হোটেলে মদ্যপ পানীয়তে নেশার ওষুধ মিশিয়ে অভিযুক্ত তাঁকে ধর্ষণ করেন।

    ভুক্তভোগীর দাবি, এই ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করা হয় এবং তা দেখিয়ে অভিযুক্ত তাঁকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। হুমকি দেওয়া হয় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর, সম্মানহানি করার। এমনকি তাঁকে ফাঁকা কাগজ ও স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এর পর থেকে মাসের পর মাস চণ্ডীগড় ও পরে জয়পুরে ভাড়া করা আবাসনে বারবার যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাঁকে। অভিযুক্ত নিজের সামাজিক যোগাযোগ ও প্রভাব খাটিয়ে তরুণীকে ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।

    চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, অভিযুক্ত কেবল যৌন নির্যাতনই করেননি, ধারাবাহিকভাবে ভুক্তভোগীকে ভয় দেখিয়ে, অপমান ও ব্ল্যাকমেল করে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি দাবি করেছিলেন তরুণী তাঁর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছেন, যা আসলে মিথ্যা। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন তরুণী। এমনকি বাড়ি ফেরার পরেও ফোনে হুমকি ও বার্তায় হয়রানি চলতে থাকে। অবশেষে পরিবারের কাছে বিষয়টি জানালে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয় এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়।

    অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক গুরুতর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে— বারবার ধর্ষণ, অবৈধ আটক, শারীরিক নিগ্রহ, স্টকিং ও অপরাধমূলক ভয় প্রদর্শন। হিসার পুলিশ মোবাইল তথ্য সংগ্রহ করেছে, প্রমাণ জোগাড় করেছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।হিসারের পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীর মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং তদন্তে কোনও গাফিলতি করা হবে না। তিনি স্বীকার করেছেন যে অভিযুক্তের সামাজিক প্রভাবের কারণে মামলাটি জটিল, তবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই এগোনো হচ্ছে। আগামী শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫।

    এই ঘটনা কেবল একজন নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত নয়, কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা ও আস্থার ভিত্তিকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও সামাজিক সংগঠনগুলির দাবি, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি কার্যকর করতে হবে।সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগেই কেবল এ ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব— এটাই ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার একমাত্র পথ।
  • Link to this news (আজকাল)