কলকাতার প্রাচীনতম বইয়ের দোকানে চালু হল বিনামূল্যের লাইব্রেরি ...
আজকাল | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ঐতিহাসিক দাসগুপ্ত অ্যান্ড কো., শহরের প্রাচীনতম টিকে থাকা বইয়ের দোকান, অবশেষে খুলে দিল এক বিনামূল্যের পাঠাগার। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দোকানটি আজও শহরের সাহিত্য ও শিক্ষার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। সম্প্রতি ২৪ জুলাই, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্ণধার অরবিন্দ দাসগুপ্তর ৭৩তম জন্মদিনে এই পাঠাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
দোকানের দ্বিতীয় তলায় তৈরি এই পাঠাগার মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যারা অর্থের অভাবে বই কিনতে পারেন না। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন পাঠক এখানে আসছেন। অনেকে আবার দীর্ঘ সময় বসে পাঠাগারের বিরল সংগ্রহ উপভোগ করছেন। দোকানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরবিন্দ দাসগুপ্ত বলেন,“শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার এবং জাতির উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই বিনামূল্যের পাঠাগার জ্ঞান ও শিক্ষাকে সমাজের কাছে আরও সহজলভ্য করারই একটি প্রয়াস।”
শুরু থেকেই পাঠাগারটি কেবল স্থানীয় নয়, বিদেশি দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করছে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও আমেরিকা থেকে আগত পাঠকরাও এখানে নিয়মিত আসছেন। সম্প্রতি ইউনেস্কোর এক প্রতিনিধিদলও পাঠাগারটি ঘুরে দেখেছেন এবং ভারত ও কলকাতাকে নিয়ে বহু বই কিনেছেন। এদিকে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ফোনে দাসগুপ্ত পরিবারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ভিডিও কলে পাঠাগারের একটি ভার্চুয়াল ট্যুরও উপভোগ করেছেন।
দাসগুপ্ত অ্যান্ড কো. শুরু হয়েছিল গিরিশচন্দ্র দাসগুপ্তের হাত ধরে, যিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোর জেলার কলিয়াগ্রাম থেকে কলকাতায় আসেন। তখন থেকেই কলেজ স্ট্রিট ভারতের শিক্ষা ও সাহিত্যের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় তিনি সেখানে বইয়ের দোকান খোলেন। আজও এই দোকানটি গ্রেড IIA হেরিটেজ মর্যাদা পেয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন ক্রেতা এখানে আসেন, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী বা গবেষক।
আসন্ন দুর্গাপুজোর পর দোকানটি একটি অনলাইন লাইব্রেরি খোলার পরিকল্পনাও করেছে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এই পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া স্পনসরশিপের প্রস্তাব দিলেও তা এখনও ঝুলে রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুযায়ী প্রায় ২৫০ বর্গফুট জায়গা সাজানো হবে, যেখানে থাকবে ছয়টি কম্পিউটার ও তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। পাঠকরা এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো বই অনলাইনে পড়তে পারবেন।
দাসগুপ্ত অ্যান্ড কো. শুধু একটি বইয়ের দোকান নয়, বরং ইতিহাসের সাক্ষী। স্বাধীনতা আন্দোলন, দুই বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ, ভারতের স্বাধীনতা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ, এমনকি নকশাল আন্দোলন—সব কিছুর মধ্য দিয়েই এটি টিকে থেকেছে। অরবিন্দ দাসগুপ্ত বিশ্বাস করেন, যদি এত ঝড়-ঝাপটা সহ্য করার পরও এই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে, তবে অনলাইন বুকশপের চ্যালেঞ্জও তারা মোকাবিলা করতে পারবে। কলকাতার বুকল্যান্ড কলেজ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে দাসগুপ্ত অ্যান্ড কো. আজও মনে করিয়ে দেয়, বই কেবল পণ্য নয়, বরং জ্ঞান ও সভ্যতার উত্তরাধিকার। পাঠাগারটি নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।