বাংলা বলার অপরাধে ফের ভিনরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বাংলার শ্রমিক। পেশায় ফেরিওয়ালা এই ব্যক্তি ওড়িশার জলেশ্বরের রাজপুর বস্তিতে প্রায় পাঁচ বছর ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর মালপত্র লুঠ করে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁর থেকে নগদ টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাজ ছেড়ে বাধ্য হয়ে বাংলায় নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিনি। তাঁর বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এক মেয়ে ও এক ছেলে স্কুলের পড়ুয়া। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে নিজের রাজ্যে পালিয়ে এসেছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, কাটোয়া থানার করজগ্রাম মাঠপাড়ার বাসিন্দা তারজেন শেখ ওড়িশার জলেশ্বরে সাইকেলে ঘুরে স্টিলের বাসন বিক্রি করতেন। গত রবিবারও তিনি প্রতিদিনের মতো কাজে বেরিয়েছিলেন। লক্ষণডিহির কাছে রাস্তায় দু’জন তাঁর পথ আটকে ওড়িয়া ভাষাতেই তাঁর পরিচয় ও গন্তব্য জানতে চায়। কিন্তু তারজেন ওড়িয়া বলতে না পারায় সে বাংলা ভাষাতেই উত্তর দেয়। তারপরেই ওই দুজন ব্যক্তি মোটা কাঠ দিয়ে তাঁর উপর হামলা করে। তারজেনকে মারধর ভিডিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়েছিল ওই দুই ব্যক্তি।
তারজেন জানিয়েছেন, ‘আমার কাছে থাকা সব পরিচয়পত্র যেমন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড তাঁদের দেখিয়েছিলাম। বোঝানোর চেষ্টা করি আমি বাংলাদেশি নই। কিন্তু ওঁরা আমার কোনও কথা শুনতে চায়নি। উলটে মারধর করতে থাকে। সাইকেলে থাকা বাসন ফেলে দিয়েছিল। কিছু বাসন আবার নিয়েও নেয়। নগদ ৬ হাজার টাকা ছিল, সেই টাকাও কেড়ে নিয়েছে। আমি কোনওরকমে পালিয়ে বেঁচেছি।’
পালিয়ে ভাড়াবাড়িতে সেদিনের মতো রাতটা কাটিয়ে পরের দিন ওই শ্রমিক স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তারপর আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ট্রেন ধরে সোজা হাওড়ায় চলে আসেন। এরপর বাড়ি ফিরে কাটোয়া থানায় ও কাটোয়া ১ বিডিওর দ্বারস্থ হন তারজেন। সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন পুলিশ ও বিডিওকে। তাঁরা গোটা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতের কব্জির হাড় ভেঙে গিয়েছে। আতঙ্কে তিনি এই বাংলায় ফিরে এসেছেন। এরপর ওড়িশায় থাকলে হয়তো প্রাণ সংশয় হতে পারত বলে জানিয়েছেন তারজান।