• ছত্তীসগড়ে এনএইচএম কর্মীদের গণপদত্যাগে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার পথে ...
    আজকাল | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছত্তীসগড়ে ন্যাশনাল হেলথ মিশনের (এনএইচএম) চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের আন্দোলন ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই আন্দোলন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। মূলত নিয়মিতকরণ, বেতন বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য বিমা ও কর্মপরিস্থিতি উন্নতির দাবিতে কর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। কিন্তু সরকার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার কোনও সমাধান না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

    ১৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটের মধ্যে গত কয়েকদিনে বড়সড় মোড় এসেছে। এনএইচএম কর্তৃপক্ষ ২৫ জন কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলে প্রতিবাদে একযোগে আরও ১৪ হাজারের বেশি কর্মী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে কার্যত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র, গ্রামীণ স্বাস্থ্য কার্যক্রম এবং স্কুল স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো প্রকল্পগুলোতে বড় প্রভাব পড়ছে। শিশু ও দরিদ্র পরিবার এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

    সরকারি পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, কর্মীদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ইতিমধ্যেই মানা হয়েছে এবং বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেতন বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য বিমা এবং কিছু ছুটির সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কিন্তু কর্মী সংগঠনের বক্তব্য, কাগজে-কলমে সিদ্ধান্ত থাকলেও মাঠে কোনও বাস্তব পরিবর্তন ঘটেনি। এই কারণেই দীর্ঘদিন ধরে স্মারকলিপি দেওয়া এবং আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা ধর্মঘটের পথ বেছে নিয়েছেন।

    এই সংকট রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আলোড়ন ফেলেছে। বিরোধী কংগ্রেস বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি সরকার ভঙ্গ করেছে এবং কর্মীদের প্রতি উদাসীন থেকেছে। এমনকি প্রতিবাদ মিছিলের উপর লাঠিচার্জের ঘটনাও ঘটেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। বিজেপি সরকার বলছে, তারা কর্মীদের দাবির প্রতি আন্তরিক, তবে বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে।

    এনএইচএম কর্মীদের গণপদত্যাগ এবং চলমান ধর্মঘট রাজ্যের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। একদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা আশঙ্কা করছেন তাদের সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান আসবে না। সাধারণ মানুষ মনে করছে, সরকার ও কর্মীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

    প্রায় ১৬,০০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে বাদ দিয়ে কোনও রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখা কার্যত অসম্ভব। তাই দ্রুত সমাধান খোঁজা এখন সরকারের দায়িত্ব। তবে কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা আলোচনার পথ বন্ধ করতে চান না, কিন্তু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছাড়া তারা আন্দোলন বন্ধ করবেন না। এই অচলাবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ ও সংকট ততই বাড়বে।
  • Link to this news (আজকাল)