• খিঁচুনি, আর বমি বমি ভাব! কয়েকদিনের মধ্যেই ২০ জনের মৃত্যু, অজানা অসুখের আতঙ্কে কাঁপছে এই রাজ্য ...
    আজকাল | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বন্যা পরিস্থিতিতে অজানা অসুখের আতঙ্কে জেরবার অন্ধ্রপ্রদেশের এক গ্রাম। গত দুই মাসে এই অজানা অসুখেই কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মেলিওডোসিস নামের এক ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখের জেরেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মৃতদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। বিশেষত বর্ষার সময় এবং বন্যা কবলিত এলাকায় মাটি ও জল থেকে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। একটানা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সাহায্যে এই অসুখের সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসার আওতায় এলেই তার সম্ভব।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায় কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু স্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এই জেলায়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিশেষ মেডিক্যাল টিম গুন্টুর জেলার টুরাকাপালেম গ্রাম পরিদর্শন করেছে। এই রোগের মতো উপসর্গ দেখা দিলে শীঘ্রই হাসপাতালে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গ্রামবাসীদের। 

    এখনও পর্যন্ত ২৫০০ গ্রামবাসীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের কিডনির স্বাস্থ্য, রক্তচাপ, ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে মেডিক্যাল টিম। 

    প্রসঙ্গত, ২০২০ সালেও অজানা রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশে। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের এলুরু শহরে অজানা রোগে এক জনের মৃত্যু হয়। আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তত ২৯২ জন। ক্রমেই অসুস্থের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০০। সেই সময় জানা গিয়েছিল, সকলেরই হঠাৎ খিঁচুনি ও বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। অচৈতন্য হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অসুস্থদের সকলের রক্ত পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান বা ‘সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড’ পরীক্ষা হয়েছে। ধরা পড়েনি রোগ। পানীয় জলেও সমস্যা মেলেনি। 

    এলাকা থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিজয়ওয়াড়ায় পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, এই সমস্যার মূলে ক্লোরিন-যুক্ত কোনও জৈব যৌগ থাকতে পারে। তবে সব মিলিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এখনও অন্ধকারে। 

    প্রসঙ্গত, চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে অজানা অসুখে মৃত্যুমিছিলে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরেও। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গ্রামে পরপর মৃত্যু। সকলেরই উপসর্গ এক। অজানা অসুখের আতঙ্কে বর্তমানে তটস্থ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার বুধাল গ্রামের বাসিন্দারা। এই গ্রামে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬। হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন অনেকে। 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ৪৫ দিনের মধ্যে রাজৌরির বুধলা গ্রামে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক শিশু আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জ্বর, বমি বমি ভাব, গায়ে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। মৃত্যুর দিন কয়েক আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তারা। 

    চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, অসুস্থদের এমআরআই করানোর পর দেখা গেছে, নিউরোটক্সিন নামের তরল পদার্থ ব্রেন টিস্যুতে জমা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি কোনও ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার কারণে নয়, বরং বিষক্রিয়ার জেরেই পরপর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এক গ্রামে এত মানুষের বিষক্রিয়া হল কীভাবে! তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

    গ্রামে অজানা অসুখ ঘিরে আতঙ্ক ছড়াতেই স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে রবিবার রাজৌরিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি টিম যাবে। অসুখের কারণ খতিয়ে দেখবে তারা। 
  • Link to this news (আজকাল)