• শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে রণক্ষেত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আহত একাধিক ছাত্র, ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিশবাহিনী ...
    আজকাল | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের অন্তর্গত লালনগর হাইস্কুল। দু'দল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে  আহত হয়েছে কমপক্ষে ৮ জন ছাত্র। আহত ছাত্রদের মধ্যে ছ'জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। 

    ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের পর তাদের অভিভাবকরাও সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েন বলে  অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় কয়েকজন আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রী বাড়ি চলে যাবার চেষ্টা করলে লালনগর গ্রামের কিছু বাসিন্দা কয়েকজন ছাত্রকে ব্যাপক মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা রেশ যাতে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই কারণে পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে দীর্ঘক্ষণ লালনগর এবং নওপাড়া-শিমুলিয়ার  মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে হরিহরপাড়া থানা এবং আশেপাশের আরও কয়েকটি থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী গ্রামে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। 

    জানা গিয়েছে, 'শিক্ষক দিবস' উপলক্ষে  শুক্রবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শনিবার লালনগর হাইস্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের তরফে শিক্ষকদের সম্মানিত করার জন্য স্কুলের হলঘরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। স্কুল সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর নাগাদ স্কুলের হলঘরে সেই অনুষ্ঠান চলার সময় হঠাৎই  দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির কিছু ছাত্রের মধ্যে হলঘরের বাইরের  সংঘর্ষ বেঁধে যায়। কিছু শিক্ষকের অনুমান , হলঘরে বসার জায়গা পাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল। ওই স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, 'কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা দেখতে পেলাম বেশ কিছু ছাত্র  স্কুলের চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ ভেঙে একে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।'  স্কুলের শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্ররা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়ে নেয় গোটা স্কুল চত্বর। 

    স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে প্রথমদিকে এই সংঘর্ষ শুরু হলেও পরের দিকে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্ররা যে যাকে হাতের কাছে পেয়েছে তাকেই মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষ বড় আকার নিতে শুরু করলে নওপাড়া এবং শিমুলিয়া গ্রামের কিছু ছাত্রছাত্রী  নদী পার হয়ে দ্রুত  বাড়ি ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে লালনগর গ্রামের কিছু অভিভাবক কয়েকজন ছাত্রকে ফেরিঘাটের কাছে ধরে বাঁশ দিয়ে তাদের প্রচন্ড মারধর করে। 

    খবর পেয়ে স্থানীয় ক্যাম্প থেকে পুলিশ গিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও  সংখ্যায় তারা কম থাকায় গ্রামবাসী বা স্কুল ছাত্রদের  আলাদা করতে পারেনি। পরে বহরমপুর এবং হরিহরপাড়া থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তৌফিক সরকার নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়,'স্কুলে যখন সংঘর্ষ শুরু হয় সেই সময় আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করেই  দ্বাদশ শ্রেণির কিছু ছাত্র দশম শ্রেণির ছাত্রদের মারতে শুরু করে। এরপর তারা এসে আমার চোখে প্রচন্ড জোড় আঘাত করে। দ্বাদশ শ্রেণির দাদারা মনে করেছিল আমি হয়তো দশম শ্রেণির ছাত্রদের সঙ্গে  যুক্ত হয়ে কাউকে মারধর করেছি।' ওই ছাত্র বর্তমানে মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাবিব শেখ নামে অপর এক ছাত্র জানায়,' শিক্ষক দিবস উপলক্ষে স্কুলের মাঠে আজ একটি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা  নওপাড়া-শিমুলিয়া থেকে সেই খেলা দেখতে গিয়েছিলাম।  স্কুলে যখন সংঘর্ষ শুরু হয়  আমরা ফিরে চলে আসছিলাম।  সেই সময় গ্রামের লোকেরা আমাদের ধরে বাঁশ দিয়ে প্রচন্ড মারধর করেছে।'

    লালনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সারওয়ার্দি বিশ্বাস বলেন,' শুক্রবার স্কুল ছুটি থাকায় আজ ছাত্র-শিক্ষক সকলের উদ্যোগে স্কুলের হলঘরে  শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল।  হঠাৎই কী কারণে দু'দল ছাত্র নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল তা আমি বুঝতে পারিনি।' তিনি জানান,' সংঘর্ষের কারণে আমরা শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। আমি শুনেছি কয়েকজন ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এলাকায় এখনও পুলিশবাহিনী রয়েছে। আমি গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করছি।' সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হতে চলেছে  বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)