• মহিষাসুরমর্দিনী পালায় হায়দরাবাদ মাতাবে ছৌ দল, পুরুলিয়ার ঢাকিদের বরাত কলকাতা থেকে দিল্লি
    প্রতিদিন | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুজোয় শুধু মুখোশে নয়। ছৌ নেচে মহিষাসুরমর্দিনী পালা ও ঢাক বাজিয়ে কলকাতা, দিল্লি, হায়দরাবাদ কাঁপাবে পুরুলিয়ার লোকশিল্পীরা। কয়েক হাজার টাকার বরাতে পুজোর অর্থনীতি একেবারে চাঙ্গা পুরুলিয়ার লোকশিল্পীদের গ্রামগুলিতে। বিদেশের মঞ্চ কাঁপানো বীরেন কালিন্দীর নাটুয়া ও তাদেরই ছৌ নাচের দল এবার সবচেয়ে বেশি বরাত পেয়েছে।

    তবে তাঁর দলের সঙ্গে থাকছেন না নাটুয়া, ছৌ নাচ শিল্পী বীরেন কালিন্দী। তিনি পুঞ্চা ব্লকের কেন্দার জামবাদ জনকল্যাণ সংঘের ছৌ নৃত্য পার্টির দলে শামিল হয়ে হায়দরাবাদ যাবেন। সেখানে মহিষাসুরমর্দিনী পালায় তাঁকে দেখা যাবে ঢোলবাদক হিসেবে। চলতি বছর সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে তাঁর দল ছৌ নেচে রাজধানীতে নজর কাড়ে। ভিন রাজ্যে রওনা হওয়ার আগে ছৌ শিল্পীদের পাশাপাশি ঢাকিরাও এখন অনুশীলনে ব্যস্ত।

    ঢাক বাজিয়ে দেশে-বিদেশে নাম কুড়িয়েছিলেন পুরুলিয়ার বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামের হাড়িরাম কালিন্দী। আজ তিনি নেই। কিন্তু তাঁর ছেলেরা বাবার অনুসৃত পথে ঢাক বাজান। সেই হাড়িরাম কালিন্দী-র কাকুর ছেলে বীরেন কালিন্দী। তাঁর নাটুয়া দলের সদস্যরা ঢাক বাজাতে যাচ্ছেন মহানগর, রাজধানী। বীরেন কালিন্দির সেজো ভাই বলরাম কালিন্দী। তাঁর ১৭ বছরের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র গান্ধীরাম কালিন্দী, আরও দুই ঢাকি যুধিষ্ঠির ও লেলু কালিন্দী মিলে মোট চারজন কলকাতার টালিগঞ্জে মাইকেল মধুসূদন পার্কের পুজোয় ঢাক বাজাবেন। পঞ্চমী থেকে টানা একাদশী পর্যন্ত তাঁরা সেখানে থাকবেন। ২০ হাজার টাকার বরাতে ইতিমধ্যেই তাঁরা ৫ হাজার টাকা অগ্রিম পেয়েছেন। ওই পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা বিপাশা সেন রায় বলেন, “আমাদের পুজোয় ঢাকি, পুরোহিত এই বিষয়গুলোকেই আমরা অগ্রাধিকার দিই। সেইজন্যই তো কিংবদন্তি ঢাকি প্রয়াত হাড়িরাম কালিন্দীর গ্রাম পাঁড়দ্দা থেকে আমরা ঢাকি নিয়ে আসছি।”

    শিল্পী বীরেনের মেজ ভাই মিহির কালিন্দী, তাঁর ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়া বিশ্বনাথ কালিন্দী ও সঞ্জয় কালিন্দী নামে এক ঢাকিকে নিয়ে মোট তিনজন দিল্লির ৯২ ময়ূরবিহার, ফেজ ২ মণ্ডপে ঢাক বাজাবেন। এই দলে থাকা সঞ্জয়ের বাড়ি চিপিদা গ্রামে। বাকি সকলেই থাকেন বলরামপুরের পাঁড়দ্দায়। রাজধানীর ওই বরাত ২৭ হাজার। এখানে শিল্পীরা ৫ হাজার টাকা অগ্রিম হিসাবে পান। মণ্ডপে তাঁদেরকে ষষ্ঠীর আগেই পৌঁছতে হবে। ওই পুজো কমিটির তরফে তপন গুহ বলেন, “পুরুলিয়ার বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামের ঢাকের বোল যেন অন্যরকম। এ জন্যই আমরা ওই গ্রামের শিল্পীদের বরাত দিই।”

    বীরেন কালিন্দীর ছৌ নৃত্য পার্টি কলকাতার যাদবপুরের কাছে অজয়নগর ও গলফ ক্লাব রোডের কলাবাগান দুর্গোৎসব মণ্ডপে মহিষাসুরমর্দিনী পালা ফুটিয়ে তুলবেন। এই অনুষ্ঠান রয়েছে যথাক্রমে সপ্তমী ও অষ্টমী। অর্থাৎ সপ্তমীতে অজয়নগর, অষ্টমীতে গল্ফ ক্লাব রোডে। এই দলেরই আরও কয়েকজন শিল্পী সল্টলেকের একটি হোটেলে একেবারে ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী থেকে একেবারে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মহিষাসুরমর্দিনী পালা তুলে ধরবেন। বীরেন কালিন্দীর কথায়, “পুজোর সময় সকলেই মহিষাসুরমর্দিনী পালা-ই দেখতে চান। তাই প্রত্যেকটি মণ্ডপের অনুষ্ঠানে আমরা এই পালা তুলে ধরি। যদি দর্শকদের তরফে অনুরোধ আসে তবে অন্য পালায় আমরা নাচি। এবারের বরাত যে খুব ভালো বা খারাপ তাও নয়। মোটামুটি ঠিকই আছে।”

    কেন্দার জামবাদ জনকল্যাণ সংঘ ছৌ নৃত্য পার্টি এবার ডাক পেয়েছে হায়দরাবাদে। নিজামপেট সপ্তপদী গার্ডেনস প্রবাসী অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে শিল্পীরা মহিষাসুরমর্দিনী পালা তুলে ধরবেন। হায়দরাবাদে তাদের দুটি অনুষ্ঠান। এই দলের ওস্তাদ গৌতম মাহাতো বলেন, “এখানে আমরা ৫০ হাজার টাকার বরাত পেয়েছি। ট্রেনের সমস্ত খরচ, খাওয়া-দাওয়া সবই পুজো কমিটি আলাদাভাবে ব্যবস্থা করেছে।” ১৫ জনের এই দল ২৫ সেপ্টেম্বর রওনা দেবে। ২৬ ও ২৭ তারিখ অনুষ্ঠান রয়েছে। হায়দ্রাবাদের ওই পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা শুভদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পুজোয় এবার আমরা পুরুলিয়ার সংস্কৃতি ছৌ নাচকে তুলে ধরছি। ওই নাচে মহিষাসুরমর্দিনী পালা তুলে ধরা হবে।” এদিকে হাড়িরাম কালিন্দীর ছেলেরাও ঢাক বাজানোর বরাত পেয়েছেন। তবে এই জেলাতেই। বলরামপুরের বাঁশগড়ের পুজোয় তাদের বরাত ১৫ হাজার।
  • Link to this news (প্রতিদিন)