সৌরভ মাজি ও অর্ক দে, বর্ধমান: মেধার প্রমাণ দিয়েছেন আগেই। একসময়ে ‘মাওবাদ’কে পাথেয় করলেও গবেষণার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসেননি কখনও। ফলস্বরূপ ‘সেট’ পাশ করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণারত ‘কমরেড’ অর্ণব দাম। কিন্তু এই গবেষণাকালেও বঞ্চনার শিকার। হাজার জায়গায় চিঠি লিখেও স্কলারশিপ এখনও অমিল। তার প্রতিবাদে এবার জেলেই অনশনে বসলেন অর্ণব। শুক্রবার বিকেল থেকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে অনশন শুরু করেছেন বলে খবর। তবে স্কলারশিপের বিষয়টি রাজ্য সরকারের উপর ছেড়ে দায় ঝেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সেট বা কলেজ সার্ভিস কমিশনে ভালো ফলাফল করার পর অর্ণব দাম ওরফে ‘কমরেড’ বিক্রমের ইচ্ছে ছিল, যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করার। তবে তিনি সুযোগ পেয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ইতিহাস নিয়ে এই মুহূর্তে গবেষণারত অর্ণব। কিন্তু গবেষণা করাকালীন নির্ধারিত স্কলারশিপের কোনও টাকাই পাননি তিনি। বইপত্র দূরস্ত, খাতা-কলম কেনারই টাকা নেই তাঁর কাছে। শুক্রবার অর্ণবের এই পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করেছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর। সেখানে অর্ণবের মেধা, ভালো ফলাফলের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। পোস্টে লেখা ? ‘অনেকেই জানেন রাজনৈতিক বন্দি অর্ণব দাম জেলবন্দি অবস্থায় ইতিহাসে ৭০-৭৫% নম্বর সহ বিএ, এমএ পাশ করেছেন। ‘সেট’ পাশ করেছেন। পুলিশ যেতে দেয়নি বলে ‘নেট’ পরীক্ষায় বসতে পারেননি। বর্তমানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। পিএইচডি-র অ্যাডমিশন টেস্টে ফার্স্ট হয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রথম সেমিস্টার কোর্স ওয়ার্ক পরীক্ষায়ও অর্ণব ফার্স্ট হয়েছেন। কিন্তু অর্ণবকে কোনও স্কলারশিপই দেওয়া হয় না। অথচ সব পরীক্ষায় প্রথম অর্ণবেরই স্কলারশিপ সবার আগে পাওয়ার কথা। অর্নব জানিয়েছেন, নন-নেট স্কলারশিপ প্রাপকদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে অর্ণবের নাম নেই।’
ন্যায্য স্কলারশিপের জন্য সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরেই অর্ণব চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সমাধান অধরাই। এবার প্রতিবাদে অনশন শুরু করলেন অর্ণব। বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে শুক্রবার বিকেল থেকে খাওয়াদাওয়া করেননি। এনিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক তথা অর্ণব দামের গবেষণার গাইড সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, “রিসার্চ স্কলারদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, পড়ুয়াদের কাছে স্কলারশিপের জন্য আবেদন জানানোর একাধিকবার সুযোগ থাকে। প্রথমবার অনুমোদন না পেলেও অর্ণব দাম পরবর্তীকালে আবেদন জানাতে পারবেন।” বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার নাথের বক্তব্য, “অর্ণবের আবেদন আমরা সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠিয়েছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অন্যান্য যে সব সুবিধা, ফি মকুব করা সবই করা হয়েছে।”