গত বছরের তুলনায় প্রতিমার অর্ডার এল দ্বিগুণেরও বেশি, খুশি কৃষ্ণনগর
বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: বাকি আর একুশ দিন। নদীয়া শহরের শিল্পালয়গুলিতে নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই মৃৎশিল্পীদের। তাই মৃৎশিল্পের আঁতুড়ঘর কৃষ্ণনগরে যেন নয়া প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। প্রচুর প্রতিমার বায়নার ভিড়ে চরম ব্যস্ত শিল্পীরা। বায়না বেশি আসা মানেই বাড়বে লাভ। শিল্পীদের এই ব্যস্ততার কারণে অনেক পরিবারও কাজের সুযোগ পাচ্ছে। কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে রং মাখানো। কাপড় বসানো, চোখ আঁকা, অলংকার লাগানো, সব মিলিয়ে একেকটি প্রতিমা তৈরির কাজে যুক্ত থাকছেন বহু মানুষ। ফলে পুজোর আগে মূর্তি তৈরি ঘিরে বদলে যায় এলাকার অর্থনীতি। এবার প্রচুর অর্ডার আসায় খুশির হাওয়া বইছে কৃষ্ণনগরের পালপাড়ায়।
কৃষ্ণনগরের প্রতিমার সূক্ষ্ম কারুকাজ ও নান্দনিক রূপ শুধু রাজ্য নয়, দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সমাদৃত। ইতিমধ্যেই বহু প্রতিমা বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। এছাড়া অর্ডার এসেছে কলকাতা, হাওড়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে।
বেশিরভাগ মৃৎশিল্পী জানালেন, করোনাকালের পরে এ বছর প্রতিমার অর্ডারের ছবি একেবারেই আলাদা। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ডার এসেছে দ্বিগুণেরও বেশি। মূর্তি তৈরির কাজ শুরুর পর থেকেই ক্রমাগত বেড়েছে অর্ডার। একেকজন শিল্পী ১০ থেকে ৪০টিরও বেশি প্রতিমার অর্ডার হাতে নিয়েছেন। বাড়ির পুজোর জন্য ৩ ফুট থেকে ৬ ফুট উচ্চতার প্রতিমা, বারোয়ারির জন্য ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত প্রতিমার অর্ডার এসেছে।
রথতলা পালপাড়ার তরুণ শিল্পী সোমনাথ পাল বলেন, গতবারের চেয়ে এবছর প্রায় ১০টি অর্ডার বেশি এসেছে। এই বছর এসেছে ৩৫টি অর্ডার। প্রতিমার দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় দেড় লাখ পর্যন্ত রয়েছে। এবার অর্ডারের সংখ্যা এতই বেশি যে, সময়মতো শেষ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এক প্রবীণ শিল্পী চণ্ডী পাল বলেন, চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিমা গড়ছি। বিগত কিছু বছরের তুলনায় এ বছর অর্ডার ভালই আছে। মৃৎ শিল্পে এখন অনেক নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। ফলে এই বছর যেন কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের পুরনো দিনের অবস্থা ফিরছে। কৃষ্ণনগরবাসী অপু বিশ্বাস বলেন, আমাদের শহরের অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। পুজোর আগে এত কাজ পাওয়ায় কেবল শিল্পীরাই নন, গোটা শহরই গর্বিত। অনেকদিন ধরে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা সমস্যায় ছিলেন। এবার প্রচুর অর্ডার আসায় তাঁদের মুখে আবার হাসি ফুটেছে।