যোগীরাজ্যে পুলিসের হাতে আটক মুর্শিদাবাদের ১৮ জন ফেরিওয়ালা
বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: এবার যোগীরাজ্যে পুলিসের হাতে আটক হলেন বাঙালি ফেরিওয়ালারা! বাংলা ভাষায় কথা বলায় মুর্শিদাবাদের ১৮জন ফেরিওয়ালা বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের নগর থানার পুলিস শুক্রবার গভীর রাতে তাঁদের ভাড়াবাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। অভিযোগ, থানায় তাঁদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। এঘটনায় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত।
২জুন শক্তিপুর ও বহরমপুর থানার ১৮জন উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলায় যান। তাঁরা সেখানে ঘুরে ঘুরে শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনা ও গৃহস্থালির সরঞ্জাম বিক্রি করতেন। নগর থানা এলাকায় একটি ঘর ভাড়া করে তাঁরা থাকতেন। কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে অভাবের সংসারে টাকা পাঠাতেন। এভাবে কোনওরকমে তাঁদের জীবন কাটছিল। শুক্রবার রাতে তাঁরা যে হেনস্তার শিকার হবেন, তা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
শুক্রবার গভীর রাতে পুলিস তাঁদের ভাড়াবাড়িতে হানা দেয়। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতীয় সমস্ত নথিপত্র দেখালেও রেহাই মেলেনি। অভিযোগ, ভালো হিন্দি বলতে না পারা ও বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু হয়। খবর পেয়ে ওই বাড়ির মালিক থানায় পৌঁছন। ওই ১৮জনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিস তাঁর কাছে টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। তখন ভাড়াবাড়ির মালিক ওই পরিযায়ীদের বাড়িতে খবর দেন। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে জেলা পুলিস ওই শ্রমিকদের উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
অতিরিক্ত পুলিস সুপার(লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, এজেলার ১৮জনকে বাংলাদেশি সন্দেহে উত্তরপ্রদেশের পুলিস আটক করেছে। আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। উত্তরপ্রদেশ পুলিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই পরিযায়ীদের সমস্ত নথিপত্র পাঠিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন হরিহরপাড়ার বাসিন্দা সামিম রহমান। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েই বিধায়ককে জানিয়েছি। তারপর জেলা পুলিসকে জানানো হলে তারা উত্তরপ্রদেশ পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই ১৮জনকে ছাড়ানোর জন্য পুলিস বাড়ির মালিকের থেকে টাকা দাবি করেছে। তিনি রাজি না হওয়ায় ওই ফেরিওয়ালাদের আটক করে রাখা হয়। আমরা ওই বাড়ি মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানকার পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বিষয়টি জানিয়েছি।
হরিহরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, ওই ১৮জনের মধ্যে দু’জনের বাড়ি শক্তিপুর থানার মিল্কি গ্রামে। বাকিরা বহরমপুর থানার সাঁটুই, চৌরিগাছা ও হালসানাপাড়ার বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশে তাঁরা ফেরিওয়ালার কাজ করতেন। এলাকার বাসিন্দারা পুলিসে খবর দেওয়ায় মাঝরাতে পুলিস এসে তাঁদের তুলে নিয়ে যায়। সমস্ত ভারতীয় নথি দেখালেও মুক্তি মেলেনি। বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ীদের উপর লাগাতার অত্যাচার করা হচ্ছে। আগামী দিনে মানুষ এর জবাব দেবে।